উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জয় দিয়েই অভিযান শুরু করল বার্সেলোনা, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ও পিএসজি।
আগের দুই আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেই হতশ্রী অবস্থা বদলাতে এবার মরিয়া ছিল তারা। যে কারণে শুরু থেকেই হয়তো আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়েছে কাতালান ক্লাবটি। আর বার্সার এই আগ্রাসী মেজাজের সামনে রীতিমতো খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে বেলজিয়ান ক্লাব অ্যান্টওয়ার্প।
নিজেদের প্রথম ম্যাচে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে শুরুটা দারুণ ভাবেই করেছিল পিএসজি। প্রথমার্ধে দাপুটে খেলা পিএসজিকে আটকে রাখতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর পারেনি ডর্টমুন্ড। প্রথমে কিলিয়ান এমবাপে এবং পরে আশরাফ হাকিমির গোলে ২-০ ব্যবধানের জিতে মাঠ ছাড়ে প্যারিস জায়ান্টরা।
এদিকে রেড স্টার বেলগ্রেডের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও ৩-১ জেতে পেপ গুয়ার্দিওলার ম্য়াঞ্চেস্টার সিটির। আর্লিং হালান্ডের মিসের রাতে জোড়া গোল করে মান বাঁচান জুলিয়ান আলভারেজের। একটি গোল রদ্রির।
বার্সেলোনা বনাম অ্যান্টওয়ার্প
অ্যান্টওয়ার্পের বিরুদ্ধে এ দিন ৫-০ জেতে বার্সেলোনা। জোড়া গোল জোয়াও ফেলিক্সের। একটি করে গোল করেন রবার্ট লেওয়ানডোস্কির এবং গাভি। ৫৪ মিনিটে আত্মঘাতী গোল জেল্লে বাতাল্লির। অ্যান্টওয়ার্পের বিপক্ষে বার্সেলোনার এগিয়ে যেতে সময় লাগে মাত্র ১১ মিনিট। বার্সায় এসে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া জোয়াও ফেলিক্সের গোলে লিড পায় বার্সা। এই গোলের রেশ কাটার আগেই দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যায় বার্সা। এবার গোল করেন লেওয়ানডোস্কি। এই গোলেও ছিল ফেলিক্সের অবদান। ২২ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে বসেন জেল্লে বাতাল্লি। গোলের ব্যবধান ৩-০ করে ম্যাচ থেকে এক রকম ছিটকে যায় অ্যান্টওয়ার্প। এর পর প্রথমার্ধের বাকি সময়েও ছিল বার্সার দাপট।
আরও পড়ুন: AFC U17 Women's Asian Cup Qualifiers: কোরিয়ার কাছে লজ্জাজনক ভাবে ০-৮ হার ভারতের
বিরতির পর ৫৪ মিনিটে ব্যবধান ৪-০ করেন গাভি। লেভার অ্যাসিস্ট থেকে গোলটি করেন এই স্প্যানিয়ার্ড। আক্রমণের ধারা অব্যাহত রেখে ৬৬ মিনিটে দ্বিতীয় এবং দলের পঞ্চম গোলটি করেন ফেলিক্স। পাঁচ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর সুযোগ আরও এসেছিল বার্সার জন্য। এমন কী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হওয়ার সুযোগও এসেছিল লামিনে ইয়ামালের সামনে। কিন্তু সেটি কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ইয়ামাল। শেষ পর্যন্ত আর কোনও গোল না পেলেও বড় জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে বার্সা।
পিএসজি বনাম ডর্টমুন্ড
পিএসজির জন্য এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগটা নতুন শুরু হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এর আগে নেইমার এবং লিওনেল মেসিকে এনে এই ট্রফিটি নিজেদের নাম লেখানোর চেষ্টা করেছিল তারা। যদিও তাতে সফল হয়নি পিএসজি। নেইমারকে নিয়ে একবার ফাইনাল খেললেও, চূড়ান্ত ধাপটা আর পার করতে পারেনি তারা। এই দু'জন তারকা ক্লাব ছাড়ায় এখন সবার চোখ এমবাপের উপর। এমবাপে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শুরু দারুণ করেছেন। প্রথম মিনিট থেকে আক্রমণাত্মক ছিল পিএসজি। তবে দাপুটে আক্রমণের পরেও বক্সের কাছাকাছি গিয়ে সুবিধা করতে পারছিল না তারা । উল্টো প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল প্রায় খেয়েই ফেলেছিল। ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিট পিএসজির দাপট সামলানো এবং প্রতি-আক্রমণে যাওয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষাতেই কেটেছে ডর্টমুন্ডের।
অন্য দিকে পিএসজি মূলত ফিনিশিংয়ে অভাবে গোলবঞ্চিত হচ্ছিল বারবার। এমনকি বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েও চেষ্টা করেছেন এমবাপে। যদিও তাতে আসেনি সাফল্য। এর মধ্যে ডর্টমুন্ডের এক খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগায় পেনাল্টির সুযোগ এসেছিল পিএসজির সামনে। কিন্তু ভিএআর পরীক্ষার পর ডর্টমুন্ডের পক্ষে যায় সে সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত তাই ৭৮ শতাংশ বলের দখল রেখেও হতাশা নিয়ে বিরতিতে যেতে হয় পিএসজিকে। বিরতির পর অবশ্য গোল পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। নিজের আদায় করা পেনাল্টিতে গোল করে প্যারিসের ক্লাবকে এগিয়ে দেন এমবাপে। এর পর ৫৮ মিনিটে হাকিমির দুর্দান্ত এক গোলে ২-০ করে পিএসজি।
আরও পড়ুন: সুপার সিক্সের লড়াইটা কতটা কঠিন হয়ে গেল, কিবুর দলের কাছে হেরে উপলব্ধি মোহনবাগান কোচের
ম্যাঞ্চেস্টার সিটি বনাম রেড স্টার বেলগ্রেড
সার্বিয়ার ক্লাব রেড স্টার বেলগ্রেড যেন আর্লিং হালান্ডে কোনও ভাবেই গোল করতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। নিজেরা ১-৩ হারলেও, শেষ পর্যন্ত হালান্ডকে গোল থেকে বঞ্চিতকরে রাখে তারা। এদিন জোড়া গোল করেছেন আলভারেজ। আর একটি গোল করেছেন রদ্রির। রেড স্টার বেলগ্রেডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ম্যাচে সিটির পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে বাধ্য হন পেপ গুয়ার্দিওলা। এই অর্ধে একটি মাইলফলকও গড়েছে সিটি। ২০০৩-০৪ সালের পর এই প্রথম কোনও দল প্রথমার্ধেই ২২টি শট খেলেছে। তবে একটি শটেও গোল হয়নি। অবিশ্বাস্যই বটে! আর গোল না পাওয়ার এই যন্ত্রণা আরও বড় হয় প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে উল্টো হজম করে। প্রতি-আক্রমণ থেকে গোল করে রেড স্টার বেলগ্রেডকে এগিয়ে দেন উসমান বুখারি। শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় সিটিকে।
বিরতির পর অবশ্য গোলশোধ করতে সময় নেয়নি সিটি। খেলা শুরুর ২ মিনিটের মধ্যেই হালান্ডের কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন তারকা আলভারেজ। এই গোলের কিছু পরেই ২-০ করেও ফেলেছিল সিটি, তবে ভিএআরের ফাঁদে বাতিল হয় সেই গোল। তবে সেই গোল বাতিল হলেও ৬০ মিনিটে ২-১ করে সিটি। ফ্রি-কিক থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে বিপক্ষের কিপার ব্যর্থ হলে, সেই বল ধরে ব্যবধান বাড়ান আলভারেজই। এর পর ফোডেনের অ্যাসিস্ট থেকে গোল ৩-১ করেন রদ্রি। হালান্ড গোল না পেলেও শেষ পর্যন্ত জিতে মাঠে ছাড়ে সিটি।
অন্যান্য ফল:
- রুদ্বশ্বাস লড়াইয়ের পর নাটকীয় ভাবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে রুখে দিয়েছে লাৎসিও। এদিন ২৯ মিনিটে পাবলো বারিওসের গোলে এগিয়ে যায় অ্যাটলেটিকো। এরপর সমতা ফেরানোর জন্য লাৎসিওকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমের ৫ মিনিটের মাথায় সমতা ফেরান গোলরক্ষক ইভান প্রোভেডেল। শেষ মুহূর্তে গোল করতে লাৎসিও এতটাই মরিয়া ছিল যে গোলরক্ষকও উপরে উঠে এসেছিলেন। সতীর্থ লুইস আলবার্তোর ক্রসে দারুণ এক হেডে দলের হয়ে সমতা ফেরান ইভান।
- এসি মিলানকে আবার আটকে দিয়েছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। আগের ম্যাচে সিরি আ-তে ইন্টার মিলানের কাছে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া এসি মিলান অবশ্য ম্যাচ জুড়ে দাপট দেখিয়েছে। ৫২ শতাংশ বলের দখল রাখা মিলান সব মিলিয়ে শট নিয়েছে ২৫টি। যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। যদিও কোনওটিই গোলে পরিণত হয়নি। বিশেষ করে ম্যাচের শেষ ভাগে মিলানের একের পর এক আক্রমণ সামলেই সময় কেটেছে নিউক্যাসলের। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে এসি মিলানকে।
- ইয়াং বয়েজকে ৩-১ গোলেই হারিয়েছে আরবি লাইপজিগ।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।