যেসব টিমগুলি শুধু ঘরোয়া লিগ খেলছে তাদের প্লেয়ার ছাড়তে কী সমস্যা, এশিয়ান গেমস নিয়ে প্রশ্ন ছেত্রীর

শুভব্রত মুখার্জি: বর্তমান সময়ে ভারতীয় ফুটবল দল বেশ ভালো ফর্মে রয়েছে। সামনেই চিনের হাংঝাউতে এশিয়ান গেমসের আসর বসতে চলেছে। দীর্ঘ টানাপোড়েন,লড়াই চালানোর পরে এই আসরে ভারতীয় ফুটবল দলকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর তা সম্ভব হয়েছে এআইএফএফের বারংবার প্রচেষ্টার ফলে। এমন আবহে দাঁড়িয়ে জাতীয় দলের জন্য নতুন করে সংকট তৈরি করেছে ক্লাব বনাম ফেডারেশন দ্বন্দ। আইএসএল শুরু হচ্ছে এশিয়ান গেমসের সময়েই।ফলে অনেক ক্লাব ফুটবলার ছাড়তে একেবারেই রাজি নয়। তা নিয়েই শুরু হয়েছে দ্বন্দ। এমন আবহে দাঁড়িয়ে ভারতীয় দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী একটি আবেদন করেছেন। এশিয়ান গেমসের জন্য সম্ভাব্য সেরা দল গঠনের আবেদন জানিয়ে সুনীল ছেত্রীর বক্তব্য হয় সেরা দল পাঠাও না হলে পাঠিও না।আইএসএলের মতন টুর্নামেন্টেও যারা নিয়মিত খেলেন না কার্যত তাদেরকে নিয়েই তৈরি হয়েছে ভারতীয় দল। সুনীলের মতে তাঁর কেরিয়ারের সবথেকে কম প্রস্তুত এক স্কোয়াডের সদস্য তিনি। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে তিনি হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, ‘আমি বিষয়টি (প্রায় প্রস্তুতিহীন স্কোয়াডের সদস্য হয়ে) নিয়ে কাউকে কোন দোষ দিচ্ছি না। আমরা এই সব পরেও করতে পারব। আমি কারোর বিরুদ্ধে বিষোদগার করছি না। আমি খেলতে যাচ্ছি কারণ আমার ক্লাব এটা চায়। যদিও দলের কোচ সাইমন (গ্রেসন) একেবারেই খুশি নয়। পাশাপাশি দেশের হয়ে যখনই খেলার কথা আসে তখন আমি না করতে পারি না। তবে আমি কারোর প্রতি কোন অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছি না। আমি নিজের অপমান কখনও হতে দিতে চাই না। তাও আমি এটাই বলব এই সময়ে হয় আমাদের ক্যাম্পে না হয় চিনে থাকা উচিত ছিল।’প্রসঙ্গত সবেমাত্র বাবা হয়েছেন সুনীল ছেত্রী। তারপর সদ্য অনুশীলনও শুরু করেছেন তিনি। তিনি আরও যোগ করে বলেন, ‘যদি ক্যাম্প বা চিনে যাওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব না হয় তাহলে ভারতের এমন দল পাঠানো উচিত যেখানে ফুটবলাররা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত। যারা এর আগে একসঙ্গে অনুশীলন করেছেন। এর আগে একসঙ্গে ম্যাচ খেলেছেন। যেমন ধরুন যে রকম অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে এশিয়ান কোয়ালিফায়ারের জন্য চিনে নিয়ে গিয়েছেন ক্লিফোর্ড মিরান্ডা। অথবা যে দলটা কোচ ইগর স্টিম্যাচ নির্বাচন করেছিল। যা এআইএফএফের তরফে ১ অগস্ট ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাদের অনুশীলনের যে খামতিটা রয়েছে তা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারে এই পরিচিতি। আমার তো মনেও নেই যে আমি সুমিত রাঠির সঙ্গে অথবা নরেন্দ্রর গেহলটের সঙ্গে শেষ কবে খেলেছি। ফলে বিষয়টা ওদের পক্ষে যেমন সমস্যার হবে তেমনি আমার কাছেও সমস্যার হবে।’১৯ সেপ্টেম্বর ভারত এশিয়ান গেমসে তাদের প্রথম ম্যাচে চিনের মুখোমুখি হবে। আইএসএলের ক্লাবগুলো ফুটবলার না ছাড়ায় চরম সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছে জাতীয় দল। সেই সমস্যা সমাধানের পথ আপাতত খুঁজে পায়নি এআইএফএফ। যদিও তাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। সুনীল পাশাপাশি অবশ্য জানিয়েছেন মোহনবাগান, মুম্বই সিটি এফসি এবং ওড়িশা এফসি ফুটবলার না ছাড়ার কারণটাও তিনি বোঝেন। কারণ জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাবের হয়েও তাদের গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট খেলতে হবে। সামনেই রয়েছে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অথবা এফসি কাপের মতন টুর্নামেন্টগুলো। অন্যদিকে এশিয়ান গেমসে ফুটবল শুরু হবে ওই ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে। শেষ হবে ৭ অক্টোবর। সুনীল আরও বলেন, ‘বাকি দলগুলো (মোহনবাগান, মুম্বই সিটি এফসি এবং ওড়িশা এফসি) অনন্তপক্ষে কোচ ইগর স্টিম্যাচের পরামর্শ মতন দুজন করে ফুটবলার ছাড়তে পারত। আমি এটাও বুঝতে পারি ক্লাব বা কোচের পক্ষে কাজটা মোটেও সহজ হয় না। তবে একজন মানুষ তো শুধু আশাটুকুই করতে পারে। আমিও তাই করছি। আশা করছি এশিয়ান গেমসে সম্ভাব্য সেরা দল নিয়েই আমরা যাব। যদি তেমন কিছু নাও ঘটে তাও আমরা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেব।’ ভারতের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে চিন, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার।সুনীল জানিয়েছেন, ‘কিংস কাপে আমি খেলতে (তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়)পারিনি। আমি ইরাকের বিরুদ্ধে ভারতের খেলা দেখছি। দলকে খুব মিস করছিলাম। এই স্কোয়াডেই থাকা জিকসন (সিং)(মহেশ) নাওরেমের ও এশিয়ান গেমসের স্কোয়াডে থাকার কথা ছিল।আমি তো ক্লিফোর্ডকেই (মিরান্ডা) ফোন করতে যাচ্ছিলাম। ওঁকে শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম ওই হয়তো দল নিয়ে এশিয়ান গেমসে যাচ্ছে।’