কপাল ফেটে রক্ত বেরোচ্ছে। সারা শরীরে ক্ষত। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না। চোখে মুখে যন্ত্রণার ছাপ পষ্ট। পড়ে থাকা মোবাইল ফোনের দিকে ইশারা। পাশে উদ্ধারকারী ব্যক্তিটি নিয়ে আসলেন ফোন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘আমার মাকে ফোন লাগিয়ে দাও।’
শুক্রবার ভোর ৫ টা ৩০ এর কাছাকাছি। ঘন কুয়াশা। ঘুমে চোখ লেগে এসেছিল। নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে না পেরে ডিভাইডারের ধাক্কা মারেন ভারতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার ঋষভ পন্তের গাড়ি। জখম হন তিনি। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসেন। এক বাস চালকের সাহায্যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন পন্ত। কিছুক্ষণ পরেই দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটিতে আগুন লেগে যায়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে যখন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, হাত জোড়া করার চেষ্টা করে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন তাঁর কাছে ভগবানের সমতুল্য সেই উদ্ধারকারী বাস ড্রাইভারকে।
কুয়াশা মোড়া সকালে তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে দিল্লি-দেরাদুন সড়কে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন কুমার। তিনি হঠাৎ দেখেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ি সোজা ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। সে তাঁর সহকর্মীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পরমজিত গাড়ি সাইডে দাঁড় করাও। আমার সঙ্গে হাত লাগাও।’ ট্রাক থেকে লাফ দিয়ে পন্তের গাড়ির দিকে ছুটে যান।
সুশীল কুমার একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গিয়ে দেখি চারিদিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গাড়ির ভিতরে থাকা ব্যক্তিটি বেরোনোর চেষ্টা করছে। গাড়িতে অল্প আগুনের শিখা দেখতে পাই। আমি পরমজিতকে বলি তাড়াতাড়ি বের করতে হবে। গাড়িতে আগুন লাগবে।’ কুমার এবং তার সহকারী পন্তকে রাস্তার ধারে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তুমি ঠিক আছো? গাড়ির ভিতরে আর কেউ আছে?’
ঋষভ গাড়িতে একাই ছিলেন। মায়ের কাছে যাচ্ছিলেন। সেই অবস্থাতে দাঁড়িয়ে তিনি কুমারকে বলেন, ফোনটা এনে দিতে। ফোন করা হলেও ঋষভের মায়ের ফোন তখন বন্ধ ছিল। কুমার জানিয়েছেন, তিনি মানবিকতার খাতিরে ছুটে গিয়েছিলেন দুর্ঘটনার কবলে পড়া গাড়িটির দিকে। ঋষভ যখন তাঁর মাকে ফোন করার চেষ্টা করছিলেন। তখন তিনি পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করেন। কুমার জানতেন না যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আহত ব্যক্তিটি ভারতীয় ক্রিকেটার ঋষভ পন্ত।
অন্য একজন এসে বলেন ইনি ভারতীয় ক্রিকেটার। এ বিষয়ে সুশীল কুমার বলেন, ‘আমি খুব বেশি ক্রিকেট দেখি না। তাই জানিনা কে কে খেলেন। আমি শুধু সচিন তেন্ডুলকর ও মহেন্দ্র সিং ধোনিকে চিনি। তাই আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়নি সে কে। আমি ওকে ওই অবস্থায় ফেলে রেখে যেতে চাইনি। মানবিকতার খাতিরেই এসেছিলাম। একজন ক্রিকেটার হোক বা কোটিপতি, আমি শুধু সাহায্য করতে এবং একটি জীবন বাঁচাতে চেয়েছিলাম।’
কুমার আরও বলেন, ‘পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করার পর দশ মিনিটের মধ্যে চলে এসেছিল। পুলিশ আমার ফোন নম্বার নিল। ও তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। যাবার সময় ওর কিছু টাকা রাস্তায় ছড়িয়ে ছিল তা কুড়িয়ে পকেটে ঢুকিয়ে দিই। আর বলি ঠিক হয়ে যাবে নিজের খেয়াল রাখো।’