শারজা-সিডনি নয়, ১৯৯২ সালের এক শতরানকে সচিনের সেরা ইনিংস বললেন সৌরভ

২৪ বছরের ক্রিকেটীয় কেরিয়ারে সচিন তেন্ডুলকর হাঁকিয়েছেন ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরান। যার মধ্যে যেমন রয়েছে শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিখ্যাত সেই 'মরুঝড়ের' ইনিংস, আবার তেমনই রয়েছে সিডনিতে ধৈর্য্যশীল ২৪১ রানের অপরাজিত ইনিংসও।

সচিন ও সৌরভ। ছবি- পিটিআই।

শুভব্রত মুখার্জি: ৯০ দশকের পার্থের উইকেট ব্যাটারদের কাছে নিঃসন্দেহে বিভীষিকাময়। পেসারদের বল পড়ে ধারাবাহিকভাবে বুক সমান উচ্চতায় আসা এই উইকেটে ব্যাটিং করাটাই ছিল একটি বড় বিষয়। সেখানে বিশ্বের তাবড় তাবড় বোলারদের রীতিমতো শাসন করে এক ১৮ বছর বয়সির অনবদ্য শতরান আজও ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম চিরস্মরণীয় ইনিংস হয়ে রয়ে গিয়েছে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ক্রিকেট বিশ্ব সাক্ষী থেকেছিল এক ভবিষ্যত কিংবদন্তির। এরপর টানা ২৪টা বছর ক্রিকেট বিশ্বকে শাসন করেছেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। তাঁর ৫০ তম জন্মদিনে তাঁর কেরিয়ারের সেরা ইনিংস বাছতে গিয়ে পার্থের সেই ইনিংসটিকেই বেছে নিলেন একসময়ের জাতীয় দলে সচিনের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

২৪ বছরের ক্রিকেটীয় কেরিয়ারে সচিন তেন্ডুলকর হাঁকিয়েছেন ১০০টি আন্তর্জাতিক শতরান। যার মধ্যে যেমন রয়েছে শারজায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিখ্যাত সেই 'মরুঝড়ের' ইনিংস, আবার তেমন রয়েছে সিডনিতে ধৈর্য্যশীল ২৪১ রানের অপরাজিত ইনিংসও। আজ থেকে ২৫ বছর আগে শারজার ২২ গজে শক্তিশালী অজি বোলিংকে একার হাতে পিটিয়ে ছাতু করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। সেই সিরিজে একাই ভারতকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ফাইনালে। সেই ম্যাচে যে পাঁচটি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সচিন তা কার্যত অবর্ণনীয়। সেদিনের ধারাভাষ্যকারদের কমেন্ট্রি বক্সের সেই উচ্ছ্বাস আজও যেন কানে বাজে ক্রিকেট ভক্তদের। সেদিন ১৪৩ রানের এক দুরন্ত ইনিংস খেলে ভারতকে ফাইনালে তুলেছিলেন সচিন। পাশাপাশি ২০০৩-০৪ মরশুমে অজি সফরে ফর্ম নিয়ে সমস্যায় ছিলেন সচিন। বারবার ড্রাইভ মারতে গিয়ে আউট হচ্ছিলেন। ফলে সিডনিতে তিনি একটি অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল একটি ইনিংস উপহার দেন। একটি ড্রাইভও সেই ইনিংসে না খেলে ২৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তবে এই সব কিছুকেই যেন পিছনে ফেলেছে ১৮ বছর বয়সির পার্থে খেলা ১১৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস।

ভারতীয় দলে তাঁর সতীর্থ হিসেবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সচিন তেন্ডুলকরের একাধিক দুরন্ত ইনিংসের সাক্ষী থেকেছেন। তবে সৌরভের মতে সচিনের ২৪ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারে নিঃসন্দেহে সেরা ইনিংস ১৯৯২ সালে পার্থের ওই শতরান। সৌরভের মতে যে উইকেটে বাকি ভারতীয় ব্যাটাররা ব্যাটে বল লাগাতেই পারছিলেন না, সেখানে সচিনের এই ইনিংস ছিল অবিশ্বাস্য। সৌরভের মতে সেদিনের পার্থের উইকেটে ব্যাটিং করা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। একে গতিময় উইকেট, তার উপরে আবার বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছিলেন। সেই সময়ে সদ্য কৈশোরে পা রাখা একটা কিশোর যে অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন তা ক্রিকেটের রূপকথায় জায়গা করে নিয়েছে।

সেদিন ১১৪ রানের একটি অনবদ্য ইনিংস খেলেন সচিন তেন্ডুলকর। সচিনের ৫০ তম জন্মদিনে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, '১৯৯২ সালে ওয়াকার (পার্থের) পিচে যে গতি ছিল এখন সেই উইকেট তার থেকে অনেকটা স্লো হয়ে গিয়েছে। নিঃসন্দেহে ওই উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য খুব কঠিন উইকেট ছিল। সচিনের উচ্চতার জন্য ওর খেলতে আরও সমস্যা ছিল। অতিরিক্ত বাউন্স ছিল যা সচিনের উচ্চতায় সামলানো মুসকিল ছিল। ফলে খাটো একজন ব্যাটারের পক্ষে উইকেটের সোজাসুজি শট খেলাটা খুব কঠিন ছিল। আমি বলতেই পারি এটা ওর কেরিয়ারের সেরা ইনিংস। অত কঠিন অজি বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ওইরকম উইকেটে শতরান করা এককথায় অনবদ্য। আমাদের অধিকাংশ ব্যাটার তো ওই উইকেটে ব্যাটে বল লাগাতেই পারছিলেন না। ১৮ বছরে বয়সে খেলা এককথায় মাস্টার ক্লাস একটি ইনিংস।'