বাংলা নিউজ > ভাগ্যলিপি > কার্তিক পূর্ণিমায় কেন পালিত হয় দেব দীপাবলী, জানুন তার পৌরাণিক কারণ

কার্তিক পূর্ণিমায় কেন পালিত হয় দেব দীপাবলী, জানুন তার পৌরাণিক কারণ

দেব দীপাবলী পালিত হবে ২৯ নভেম্বর, রবিবার। এদিন প্রদোষ কালে দেব দীপাবলীর শুভক্ষণ হল সন্ধে ৫টা ০৮ মিনিট থেকে শুরু করে ৭টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত।

কার্তিক পূর্ণিমার দিনে প্রদোষকালে মহাদেব অর্ধনারীশ্বর রূপে ত্রিপুরাসুর বধ করেন। সেদিনই শিবলোক অর্থাৎ কাশী এসে দীপাবলী পালন করেন দেবতারা। তখন থেকেই কার্তিক পূর্ণিমার দিনে কাশীতে দেব দীপাবলী পালিত হয়।

কার্তিক মাসের পূর্ণিমা কার্তিক পূর্ণিমা, ত্রিপুরী পূর্ণিমা বা গঙ্গা স্নান নামেও জানা যায়। শাস্ত্র মতে কার্তিক পূর্ণিমার দিনে গঙ্গা স্নানের গুরুত্ব অপরিসীম। মনে করা হয় এদিন গঙ্গাস্নান করলে পুরো বছরের গঙ্গা স্নানের ফল লাভ করা যায়। এ দিন গঙ্গা-সহ পবিত্র নদীতে স্নান ও তীর্থ করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয় ও পাপস্খলন হয়।

আধ্যাত্মিক ও শারীরিক শক্তি সঞ্চয়ের জন্য কার্তিক সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। শাস্ত্র মতে, স্বয়ং নারায়ণের উক্তি, যে সমস্ত মাসের মধ্যে তিনিই কার্তিক মাস। এমনকি কার্তিক মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে বিষ্ণু ব্রহ্মাকে, ব্রহ্মা নারদ মুনিকে ও নারদ মুনি মহারাজ পৃথুকে অবগত করিয়েছিলেন। এই মাসের ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও পূর্ণিমাকে পুরাণে অতি পুষ্করিণী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী, কার্তিক মাসের এই তিন তিথিতে যদি সূর্যদয়ের পূর্বে উঠে স্নান করা যায়, তা হলে পুরো মাসের স্নানের ফল ভোগ করা যেতে পারে।

পুরাণ মতে, কার্তিক পূর্ণিমার দিনে ত্রিপুরাসুর নামক দৈত্যের বধ করেন শিব। এর পরই শিবকে ত্রিপুরারী নামে ভূষিত করেন বিষ্ণু। কথিত আছে যে, ত্রিপুরাসুর দৈত্যের আতঙ্কে ত্রিলোক ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত। স্বর্গের নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ত্রিপুরাসুর। 

প্রয়াগে দীর্ঘ দিন ধরে ত্রিপুরাসুরের তপের ফলে ত্রিলোক আগুনে পুড়তে শুরু করে। তখন ত্রিপুরাসুরের ডাকে সাড়া দেন ব্রহ্মা। দেবতা, স্ত্রী, পুরুষ, জীব-জন্তু, পক্ষী, নিশাচর যাতে তার বধ করতে না-পারে ব্রহ্মার কাছে এমনই বর চায় দৈত্য ত্রিপুরাসুর। এই বরের ফলেই ত্রিপুরাসুর অমরত্ব লাভ করে ও মৃত্যু ভয়হীন হয়ে দেবতাদের ওপর অত্যাচার শুরু করে।

ত্রিপুরাসুরের হাত থেকে নিস্তার পেতে ব্রহ্মার দ্বারস্থ হন দেবতারা। ব্রহ্মার পরামর্শের পর তাঁরা মহাদেবের কাছে ত্রিপুরাসুর বধের প্রার্থনা জানান। দৈত্য বধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিন লোকে ত্রিপুরাসুরের সন্ধান চালান শিব। শেষে কার্তিক পূর্ণিমার দিনে প্রদোষ কালে মহাদেব অর্ধনারীশ্বর রূপে ত্রিপুরাসুর বধ করেন। সেদিনই শিবলোক অর্থাৎ কাশী এসে দীপাবলী পালন করেন দেবতারা। তখন থেকেই কার্তিক পূর্ণিমার দিনে কাশীতে দেব দীপাবলী পালিত হয়। মনে করা হয়, কার্তিক পূর্ণিমার দিনে কাশীতে এসে দীপদান করলে পূর্বপুরুষরা মোক্ষ লাভ করেন।

আবার পুরাণ মতে, এদিনই ধর্ম ও বেদের রক্ষার জন্য বিষ্ণু মৎস্য অবতার ধারণ করেছিলেন। এ ছাড়া আষাঢ় শুক্ল একাদশী থেকে বিষ্ণু যোগ নিদ্রায় লীন থাকেন। তার পর কার্তিক শুক্ল একাদশীর দিনে তাঁর নিদ্রা ভঙ্গ হয়। বিষ্ণুর যোগ নিদ্রা থেকে জেগে ওঠার আনন্দে সমস্ত দেবী-দেবতা পূর্ণিমার দিনে লক্ষ্ণী-নারায়ণের মহাআরতী করেন, দীপ প্রজ্জ্বলিত করেন। দেব দীপাবলীর দিনে দীপদান ও ব্রত-পূজার গুরুত্ব রয়েছে। মনে করা হয় দেব দীপাবলী ব্যক্তিকে নিজের অপগুণ ত্যাগ করে সৎগুণ ধারণ করতে অনুপ্রাণিত করে। 

কার্তিক পূর্ণিমা তিথি সূচনা- ২৯ নভেম্বর দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটে।

তিথি সমাপ্তি- ৩০ নভেম্বর দুপুর ২টো ৫৯ মিনিটে।

৩০ নভেম্বর পূর্ণিমার সূর্যদয়ের কারণে এ দিনই দান-স্নান করা হবে। আবার দেব দীপাবলী পালিত হবে ২৯ নভেম্বর, রবিবার। এদিন প্রদোষ কালে দেব দীপাবলীর শুভক্ষণ হল সন্ধে ৫টা ০৮ মিনিট থেকে শুরু করে ৭টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত।

বন্ধ করুন