কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী রমা একাদশী নামে পরিচিত। এদিন বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর নিয়ম মেনে পুজো করা হয়। বিষ্ণুর যোগ নিদ্রা থেকে ওঠার শেষ একাদশী হওয়ায় এর গুরুত্ব অধিক বেড়ে যায়। রমা লক্ষ্মীর অপর এক নাম। চলতি বছর ১ নভেম্বর (সোমবার) রমা একাদশী।
রমা একাদশীতে শুভযোগ- ২ নভেম্বর রাত ৯টা ০৫ মিনিট পর্যন্ত ইন্দ্র যোগ থাকবে। চলতি বছর ইন্দ্রযোগে রমা একাদশী পালিত হবে। জ্যোতিষ শাস্ত্রে ইন্দ্র যোগকে শুভ অনুষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। এ দিন সকাল ৭টা ৫৬ মিনিট থেকে ৯টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত রাহুকাল থাকবে। জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহুকালকে অশুভ গণ্য করা হয়।
রমা একাদশীর শুভক্ষণ
একাদশী তিথি শুরু- ৩১ অক্টোবর দুপুর ২টো ২৭ মিনিটে।
একাদশী তিথি সমাপ্ত- ১ নভেম্বর দুপুর ১টা ২১ মিনিট।
একাদশী ব্রতভঙ্গের সময়- ২ নভেম্বর সকাল ৬টা ৩৪ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৪৬ মিনিট।
রমা একাদশীর মাহাত্ম্য
ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী যাঁরা রমা একাদশীর উপবাস রাখলে বিষ্ণুর পাশাপাশি লক্ষ্মীও প্রসন্ন হন। এর ফলে পরিবার থেকে দুখ, দারিদ্র এবং নেতিবাচক শক্তি দূর হয়। এমনকি পরিবারে সুখ, সমৃদ্ধি, সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়।
রমা একাদশী ব্রতকথা
একদা মুচুকুন্ডা নামক রাজার এক মেয়ে ছিল। তাঁর নাম ছিল চন্দ্রভাগা। রাজা চন্দ্রসেনের পুত্র শোভনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বিষ্ণু ভক্ত রাজা মুচুকুন্ডা নিজের সমস্ত রাজ্যবাসীকে রমা একাদশীর উপবাস করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই রমা একাদশীর উপবাস রাখত চন্দ্রভাগা।
একবার চন্দ্রভাগা নিজের স্বামী শোভনের সঙ্গে নিজের বাবার ঘরে রমা একাদশীর ব্রত অনুষ্ঠান করছিলেন। অসুস্থ শোভনও এই উপবাস করেছিলেন। কিন্তু অত্যধিক দুর্বলতার কারণে শোভন উপবাসের ধকল সহ্য করতে পারেননি এবং তাঁর মৃত্যু হয়ে যায়। তবে রমা একাদশী উপবাসের ফলে প্রাপ্ত গুণের কারণে রাজকুমার শোভন স্বর্গে স্থান লাভ করেন এবং সেখানে একটি অদৃশ্য সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। এক বার মুচুকুন্ডার রাজ্য থেকে এক ব্রাহ্মণ বাইরে আসেন এবং তিনি শোভনের রাজ্য দেখেন। ব্রাহ্মণকে সমস্ত কথা জানান রাজকুমার শোভন। সেই ব্রাহ্মণ চন্দ্রভাগাকে শোভনের বার্তা পৌঁছে দেন। একাধিক রমা একাদশী ব্রত করার পর নিজের প্রতাপ, প্রাপ্ত লাভ ও যোগ্যতার বলে শোভনের রাজ্যকে বাস্তবে পরিণত করেন এবং সেখানে দুজনে সুখে জীবন যাপন করতে শুরু করেন।
আবার অন্য এক কাহিনি অনুযায়ী প্রাচীনকালে বিন্ধ্য পর্বতে ক্রোধন নামক এক শিকারী থাকত। সে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ছিল। সারা জীবন হিংসা, লুট, মদ্যপান, মিথ্যা ভাষণ করে যখন তাঁর জীবনের শেষ পর্যায় আসে, তখন ক্রোধনের প্রাণ নিয়ে আসার জন্য যমরাজ নিজের দূত সেখানে পাঠান। যমদূত তাঁকে জানায় যে, তাঁর মৃত্যুর সময় এসে গিয়েছে। মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে ক্রোধন মহর্ষি অঙ্গিরার আশ্রমে পৌঁছয়। মহর্ষি দয়া দেখিয়ে ক্রোধনকে রমা একাদশী ব্রত করতে বলেন। এই একাদশী ব্রতর প্রভাবে নিষ্ঠুর ক্রোধন মোক্ষ লাভ করে।