শনির নাম শোনা মাত্রেই ভয় ত্রস্ত থাকেন সকলে। কারণ অধিকাংশ ব্যক্তিরাই শনিকে অশুভ প্রদানকারীমনে করেন। জ্যোতিষ মতে শনি কর্মফলদাতা। ব্যক্তির কর্ম অনুযায়ী ফল দিয়ে থাকে শনি। বর্তমানে শনি মকর রাশিতে বিরাজমান। এর ফলে ধনু, মকর ও কুম্ভ রাশির জাতকদের ওপর শনির সাড়েসাতি চলছে, আবার শবনির আড়াইয়ের প্রকোপ রয়েছে মিথুন ও তুলা রাশির ওপর। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এই রাশির বাচ্চাদের ওপর কী শনির সাড়েসাতি ও আড়াইয়ের প্রভাব পড়ে! এ বিষয় জানতে হলে একটি পৌরাণিক কাহিনি জানতে হবে।
দেবাতার মহর্ষি দধীচির হাড়ের বজ্র নির্মাণ করতে চাইলে তিনি নিজেই নিজের হাড় দেবতাদের দান করে দেন। এ বিষয় জানার পর চিন্তিত হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী সুবর্চা। নিজের স্বামীর সঙ্গে সতী হওয়ার জেদ চেপে বসেন তিনি।
তখনই আকাশবাণী হয় যে, ‘আপনার গর্ভ থেকে মহর্ষি দধীচির শঙ্কর অবতারের জন্ম হবে।’ তবে সন্তানের জন্মের পর সুবর্চা নিজের স্বামীর সঙ্গে সতী হয়ে যান। এই শিশুর নাম হয় পিপ্পলাদ। অশ্বত্থ গাছের তলায় ঋষি পিপ্পলাদের জন্ম হয়েছিল এবং তিনি সেই গাছের ফল খেয়েই বড় হয়েছিলেন। মাতৃ-পিতৃহারা পিপ্পলাদের জীবন অনেক কষ্টে কাটতে শুরু করে। এর পর শিবের কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মা দণ্ড লাভ করেন ঋষি পিপ্পলাদ।
তখন তিনি দেবতাদের কাছে প্রশ্ন করেন যে কোন ভুলের কারণে জন্মের পরই তাঁকে অনাথ হতে হয় এবং এত কষ্ট ভোগ করতে হয়। তিনি জানতে পারেন যে শনির কারণে এমন হয়েছে। তখন ক্ষুব্ধ ঋষি পিপ্পলাদ প্রশ্ন করেন যে, শনি এত নিষ্ঠুর কেন যে তিনি বাচ্চাদেরও ছেড়ে কথা বলেন না?
রাগবশত নিজের ব্রহ্মা দণ্ড দিয়ে শনিকে আক্রমণ করেন তিনি। মনে করা হয় এ কারণে শনির এক পা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পর দেবী-দেবতারা পিপ্পলাদকে বোঝান যে, শনি ন্যায়ের দেবতা, কর্মের ফল দেন তিনি। দেবতাদের কথা শুনে শনিকে ক্ষমা করে দেন পিপ্পলাদ। কিন্তু তার পাশাপাশি এ-ও বলেন যে, এর পর থেকে ১৬ বথর পর্যন্ত কোনও বাচ্চার ওপর তিনি কুদৃষ্টি দেবেন না। পাশাপাশি যে ব্যক্তি অশ্বত্থ বৃক্ষের পুজো করবে তাঁকেও শনি বিরক্ত করতে পারবে না।
অতএব যে রাশির ওপরই শনির সাড়েসাতি বা আড়াইয়ের প্রকোপ থাকুক না-কেন, সেই রাশির বাচ্চাদের ওপর ১৬ বছর পর্যন্ত শনির মহাদশার প্রভাব পড়ে না।