মহা শিবরাত্রিতে শিবের জন্য উপবাস রেখে পূজার্চনা করেন তাঁর ভক্তরা। চলতি বছর ১ মার্চ মহা শিবরাত্রি। মহিলাদের জন্য এই ব্রত বিশেষ ফলদায়ী। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী অবিবাহিত মহিলারা মহা শিবরাত্রির উপবাস রাখলে তাঁদের শীঘ্র বিবাহ সম্পন্ন হয়। আবার বিবাহিত মহিলারা নিজের সুখী জীবনের জন্য মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করেন।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এদিন শিব ও পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। আবার ঈশান সংহিতা অনুযায়ী, এদিনই প্রকট হয়েছিলেন মহাদেব। এদিন শিব ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে শিবলিঙ্গে বেলপাতা, দুধ, ফুল, অক্ষত অর্পণ করেন। ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও জ্যোতিষ দৃষ্টিতে মহা শিবরাত্রির বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে।
মহা শিবরাত্রির মাহাত্ম্য
ফাল্গুনকৃষ্ণচতুর্দশ্যামাদিদেবো মহানিশি।
শিবলিঙ্গতয়োদ্ভূতঃ কোটিসূর্যসমপ্রভ।।
ঈশান সংহিতার এই স্তোত্র অনুযায়ী, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে জ্যোতির্লিঙ্গ হিসেবে শিব আবির্ভূত হওয়ায় মহাশিবরাত্রি হিসেবে এই উৎসব পালিত হয়। সকলে এই ব্রত করতে পারেন। এই ব্রত পালন না করলে ব্যক্তি দোষ ও পাপের অংশীদার হয়। মহা শিবরাত্রি আবার ব্রতরাজ নামে খ্যাত। শিবরাত্রি যমরাজের শাসন ধ্বংস করে ও শিবলোকের পথে নিয়ে যায়। শাস্ত্র সম্মত ভাবে যাঁরা মহাশিবরাত্রিতে রাত্রি জাগরণ করেন, তাঁরা মোক্ষ লাভ করতে পারেন। পাপ ও ভয় মুক্ত করে এই উৎসব।
ফাল্গুন কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে চন্দ্র সূর্যের কাছে থাকে। সে সময় জীবন-রূপী চন্দ্রের শিব-রূপী সূর্যের সঙ্গে মিলন ঘটে। অতএব এই চতুর্দশী তিথিতে শিব পুজো করলে ব্যক্তির মনস্কামনা পূরণ হয়।
শিবরাত্রি শিবের দিব্য অবতরণের মঙ্গলসূচক তিথি। নিরাকার থেকে সাকার রূপে এদিনই অবতরিত হয়েছিলেন মহাদেব। এই অবতরণের রাত্রিই মহাশিবরাত্রি নামে খ্যাত। কাম, ক্রোধ, মোহ, লোভের মতো বিকার থেকে মুক্ত করে পরম সুখ, শান্তি ও ঐশ্বর্য প্রদানের মধ্যেই এই ব্রত পালনের মাহাত্ম্য লুকিয়ে রয়েছে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী অগ্নি শিবলিঙ্গ হিসেবে প্রকট হয়েছিলেন মহাদেব। এই শিবলিঙ্গের আদি বা অন্ত ছিল না। শিবলিঙ্গের সবার ওপরের অংশ খোঁজার জন্য ব্রহ্মা হংসের রূপে ধারণ করেন, অন্য দিকে শিবলিঙ্গের ভীত খোঁজার জন্য বরাহ অবতার নেন বিষ্ণু। কিন্তু ব্রহ্মা ও বিষ্ণু উভয়েই মহেশ্বরের আদি-অন্ত খুঁজতে বিফল হন।
আর এক কাহিনি অনুযায়ী মহাশিবরাত্রির দিনে ৬৪টি স্থানে শিবলিঙ্গ প্রকট হয়। তার মধ্যে শুধুমাত্র ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের নাম জানা রয়েছে। মহাশিবরাত্রির দিনে উজ্জৈনের মহাকালেশ্বর মন্দিরে দীপস্তম্ভ লাগানো হয়। শিবের অগ্নি-রূপী অনন্ত লিঙ্গের অনুভূতির জন্য এই দীপ স্তম্ভ লাগানো হয়। এই মূর্তির নাম লিঙ্গোভব, অর্থাৎ যা লিঙ্গ থেকে প্রকট হয়েছে। এমন লিঙ্গ যাঁর আদি বা অন্ত নেই।
শিব ও শক্তির মিলনের উৎসব
আর একটি প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, এই তিথিতেই শিব ও শক্তি অর্থাৎ পার্বতীর মিলন হয়েছিল। শিব-পার্বতী বিবাহের রাত্রি হিসেবে পালিত হয় এই উৎসব। ফাল্গুন কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিনই বৈরাগ্য ত্যাগ করে গৃহস্থ জীবনে প্রবেশ করেন শিব। একে শিবরাত্রির ১৫ দিন পর দোল পালনের অন্যতম কারণ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।