বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিকে মোহিনী একাদশী বলা হয়। এ বছর মোহিনী একাদশীর দিনে ৪ বছর পর শুভ সংযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আজ, ১২ মে, বৃহস্পতিবার বৈশাখ মাসের একাদশী। বৈশাখ, একাদশী ও বৃহস্পতিবার এই তিনটির অধিপতিই বিষ্ণু। এর আগে ২৬ এপ্রিল ২০১৮ সালে এই শুভ সংযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। এর পর ২০২৫ সালের ৮ মে পুনরায় এই শুভ সংযোগ সৃষ্টি হবে।
এবারের একাদশী বিশেষ কেন?
এ বছর বৈশাখ একাদশীতে সূর্য ও চন্দ্রের নক্ষত্রে রবিযোগের নির্মাণ হচ্ছে। পাশাপাশি উত্তরাফাল্গুনী নক্ষত্রে মাতঙ্গ নামের শুভ যোগ ও হর্ষণ যোগও থাকবে। একাদশীতে এমন যোগ খুব কম দিনই লক্ষ্য করা যায়। এই দুর্লভ সংযোগে একাদশীর পুজোর মাহাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। এ সময় ধন ধান্যে বৃদ্ধির উপায় পূর্ণ ভাবে সফল হয়। বাড়িতে সুখ-সমৃদ্ধির বিস্তার ঘটে। বহুগুণ পুণ্য লাভ করা যায় এর ফলে।
মোহিনী একাদশীর শুভক্ষণ
বৈশাখ মাসের একাদশী তিথি শুরু- বুধবার, ১১ মে সন্ধ্যা ৭টা ৩১ মিনিট থেকে।
বৈশাখ মাসের একাদশী তিথি সমাপ্ত- বৃহস্পতিবার, ১২ মে সন্ধ্যা ৬টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। এ সময় যে কোনও শুভ সময়ে বিষ্ণু বা তাঁর কোনও অবতারের পুজো করা যেতে পারে।
মোহিনী একাদশীর মাহাত্ম্য
ধর্মীয় ধারণা অনুযায়ী এই একাদশীর ব্রত পালন করলে ব্যক্তি মোক্ষ লাভ করে। মোহিনী একাদশীর ব্রত পালন করলে সমস্ত ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার এই তিথি থাকায়, একাদশী আরও শুভ ফলদায়ী প্রমাণিত হয়েছে।
ব্রত কথা
সরস্বতী নদীর ধারে ভদ্রাবতী নামক একটি নগর ছিল। সেখানে ধনপাল নামক বৈশ্য থাকতেন। ধন-ধান্যে পূর্ণ ছিলেন ওই বৈশ্য ধনপাল। সর্বদা পুণ্য কর্মে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। ধনপালের ৫ পুত্র সন্তান ছিল। এঁদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল ধৃষ্টবুদ্ধি। পাপ কর্মে নিজের বাবার অর্থ লোটাতে ব্যস্ত ছিল ধৃষ্টবুদ্ধি। একদা সে নগরবধূর সঙ্গে ঘুরতে দেখা যায়। তা দেখে ক্ষুব্ধ ধনপাল তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং তাঁর বন্ধু-বান্ধবরাও তাঁর সঙ্গ ছেড়ে দেয়।
দুঃখ ও শোকে সে এদিক-সেদিক বিভ্রান্তের মতো হাঁটতে থাকে। এক দিন কোনও পুণ্য প্রভাবে মহর্ষি কৌণ্ডিল্যের আশ্রমে পৌঁছে যায় ধৃষ্টবুদ্ধি। বৈশাখ মাস ছিল। কৌণ্ডিল্য গঙ্গা স্নান করে এসেছিলেন। শোকাহত ধৃষ্টবুদ্ধি কৌণ্ডিল্যের কাছে যায় ও হাত জোড়করে বলে, ‘ব্রাহ্মণ! দ্বিজশ্রেষ্ঠ! আমার ওপর দয়া করুন। এমন কোনও ব্রত বলুন, যার পুণ্য প্রভাবে আমি মুক্তি পেতে পারি।’
তখন ঋষি কৌণ্ডিল্য বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে মোহিনী নামক প্রসিদ্ধ একাদশী ব্রত করতে বলেন। এই ব্রতর পুণ্য প্রভাবে বহু জন্মের পাপ নষ্ট হয়ে যায়। ধৃষ্টবুদ্ধি ঋষির কথা অনুযায়ী ব্রত পালন করে। এর প্রভাবে সে নিষ্পাপ হয়ে যায় ও দিব্য দেহ ধারণ করে বিষ্ণুধাম প্রস্থান করে।