সক্রিয় রাজনীতিতে তথাগত রায়ের আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়ার থেকেই ‘গোষ্ঠীকোন্দল’-এর গুঞ্জন বেড়েছে। সেই জল্পনা থেকে ঠিকমতো রেহাই পাওয়ার আগেই নতুন করে অস্বস্তিতে পড়ল বঙ্গ বিজেপি।
সোমবার রাতে হঠাৎ করে ফেসবুকে ‘মুখ্যমন্ত্রীর (জন্য) তথাগত রায়’ নামে পেজ তৈরি করা হয়। তাও কিনা বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের 'মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ছাড়াই বিধানসভা ভোটে' নামার মন্তব্যের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সেই পেজ তৈরি করা হয়েছে। তার ‘কভার পিকচারে’ আছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি। একই নামে একটি গ্রুপও তৈরি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পেজে অবশ্য খুব বেশি ‘লাইক’ পড়েনি। কিন্তু তাতে মোটামুটি নিয়মিত পোস্ট করা হচ্ছে। সেরকমই একটি পোস্টে বিজয়বর্গীয়কে কার্যত 'বহিরাগত'-ও বলা হয়েছে। ফলে নয়া পেজে বঙ্গ বিজেপির অস্বস্তি বাড়বে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
এমনিতেই গত মাসখানেক ধরে ‘গোষ্ঠীকোন্দল’-এ জেরবার বঙ্গ বিজেপি। মুখে অবশ্য দলের মধ্যে ‘সবকিছু ঠিক আছে’ বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু তাতে গুঞ্জন থামেনি। বিশেষত দিনকয়েক আগেই নাম না করে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষকে যেভাবে কটাক্ষ করেছিলেন তথাগত, তাতে বিজেপির প্রাক্তন মেঘালয়ের রাজ্যপাল সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিলে ‘গোষ্ঠীকোন্দল’ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করেছিলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
মঙ্গলবার সকালে তথাগত অবশ্য দিলীপের সঙ্গে 'বিবাদের' দায় সংবাদমাধ্যমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। একাধিক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) কৈলাস বিজয়বর্গীয়জির সঙ্গে বৈঠকের পর আমি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দেখা করি এবং তাদের মুখের উপর বলি, সংবামাধ্যমের একটি অংশ যে শাসক দলের প্রতি এরকমভাবে অনুগত, তা আমি কখনও পশ্চিমবঙ্গে দেখিনি।’
আর সেই মন্তব্যের জন্য নাকি সংবাদমাধ্যম তাঁর উপর 'বদলা' নিয়েছে বলে দাবি করেন তথাগত। তাঁর বক্তব্য, 'একজন বলেছে যে আমি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি। কী ভুলভাল!' তথাগত জানিয়েছেন, আগামিকাল (বুধবার) দিলীপের নিউ টাউনের বাড়িতে গিয়ে দেখা করবেন তিনি।
তবে সেখানেই ‘সবকিছু ঠিক আছে’ দেখানোর চেষ্টা শেষ হয়নি। বরং সংবাদমাধ্যমকে কটাক্ষ করে তথাগত বলেন, ‘কৈলাসজির সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল মুকুল রায়েরও। আমরা আলোচনা করছিলাম যে আমরা সবাই একসঙ্গে বসতে পারি কিনা। কিন্তু মুকুল তর্ক করেন। তিনি বলেন, টাকা খাওয়া সাংবাদিকরা বাইরে বসে আছেন। যদি আমরা একসঙ্গে বসি, তাহলে এক্ষুণি একটা গল্প তৈরি করবে যে দিলীপের বিরুদ্ধে জট পাকাচ্ছেন তথাগত ও মুকুল। তার থেকে ভালো আমরা আলাদাভাবে কৈলাসজির সঙ্গে দেখা করি। আমরা তাই করি। মুকুল একজন অভিজ্ঞ এবং অনবদ্য রাজনীতিবিদ এবং আমার তুলনায় কলকাতার সংবাদমাধ্যমকে ভালোভাবে চেনেন।’
যদিও রবিবার ‘গোষ্ঠীকোন্দল’ তত্ত্বে কার্যত সিলমোহর দিয়েছিলেন এক বিজেপি নেতা। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দলের নেতাদের একটি অংশ সেই কর্মসূচি শুরু করেছেন। এটা রীতিমতো চর্চা ও অনুমানমূলক প্রতিবেদনের বিষয় হয়ে উঠেছে, যা আমাদের বঙ্গ বিজেপিকে বিভক্ত দল দেখানোর ক্ষেত্রে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সুবিধা করে দিচ্ছে।’ তাঁর অবশ্য আশা ছিল, বিজয়বর্গীয়ের ঘোষণার পর সেই ‘গোষ্ঠীকোন্দল’ তত্ত্ব থিতিয়ে যাবে।
‘মুখ্যমন্ত্রীর (জন্য) তথাগত রায়’ পেজ তৈরির পর অবশ্য সেই তত্ত্ব নয়া বল পেল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। বিষয়টি নিয়ে তথাগতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। যদিও বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘যেই পেজটা তৈরি করুন না কেন, তিনি জানেন না যে দল কীভাবে চলে। এটা নিশ্চয়ই আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা করেছেন। কিন্তু বিজেপির লোক জড়িত থাকেন, তাহলে আমায় বলতেই হবে যে তাঁরা বিস্মৃত এবং দূর দিয়েও সংগঠনের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত নন।’