পাঁচ বছরে পশ্চিমবঙ্গে কমেছে গরিব মানুষের সংখ্যা। এমনই দাবি করা হল নীতি আয়োগের রিপোর্টে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালের 'ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে'-তে পশ্চিমবঙ্গে 'মাল্টিডায়মেনশনাল' গরিব মানুষের (শুধু টাকার ভিত্তিতে নয়; শিক্ষা, পুষ্টি-সহ জীবনের বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে) হার ছিল ২১.২৯ শতাংশ। যা এখন (২০১৯-২০২১ সালের ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’) কমে ১১.৮৯ শতাংশে ঠেকেছে। আর পশ্চিমবঙ্গের জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শতাংশের নিরিখে পুরুলিয়ায় সর্বাধিক কমেছে গরিব মানুষের সংখ্যা। তাছাড়া উত্তর দিনাজপুর, মালদা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় শতাংশের ভিত্তিতে গরিব মানুষের সংখ্যা অনেকটা কমেছে বলে ওই রিপোর্টে উঠে এসেছে।
নীতি আয়োগের তরফে যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা ২০১৯-২০২১ সালের ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’-র ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। তাতে শুধুমাত্র অর্থের ভিত্তিতে গরিব মানুষকে চিহ্নিত করা হয়নি। পুষ্টি, বাল্যবিবাহ, মায়ের স্বাস্থ্য, কত বছর স্কুলে পড়াশোনা করা হয়েছে, স্কুলে উপস্থিতি, রান্নার জ্বালানি, শৌচাগার ব্যবস্থা, পানীয় জল, ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎ, সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি করেছে নীতি আয়োগ।
আরও পড়ুন: Bhutan: বিশ্বের গরিব দেশের তালিকা থেকে মুক্তি পেল সুন্দরী ভুটান, ওদের গর্বের দিন
সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, শতাংশের বিচারে 'মাল্টিডায়মেনশনাল' গরিব মানুষের নিরিখে দেশে ১৩ নম্বরে আছে পশ্চিমবঙ্গ। শীর্ষে আছে বিহার। তারপর যথাক্রমে ঝাড়খণ্ড, মেঘালয়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অসম, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, নাগাল্যান্ড, রাজস্থান, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, উত্তরাখণ্ড, কর্ণাটক, হরিয়ানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলাঙ্গানা, মিজোরাম, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, সিকিম, তামিলনাড়ু, গোয়া, কেরল, দাদার-নগর হাভেলি ও দমন-দিউ, জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, চণ্ডীগড়, দিল্লি, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষ্মাদ্বীপ এবং পুদুচেরি আছে।
পশ্চিমবঙ্গে জেলাভিত্তিক 'মাল্টিডায়মেনশনাল' গরিব মানুষের সংখ্যা (শতাংশের বিচারে)
১) পুরুলিয়া: আগেরবার ছিল ৪৯.৬৯ শতাংশ। এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬.৮৪ শতাংশ। উত্তর দিনাজপুর: গতবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর দিনাজপুরে গরিব মানুষের হার ছিল ৪২.৮৪ শতাংশ। যা এবার কমে ২১.৬৫ শতাংশে।
৩) বাঁকুড়া: গতবার ছিল ২৬.৯৯ শতাংশ। এবার কমে ১৮.৪৯ শতাংশে ঠেকেছে।
৪) বীরভূম: গতবার ছিল ২৭.৩৫ শতাংশ। এবার ১৮.২৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
৫) পশ্চিম মেদিনীপুর: গতবারের রিপোর্টে ছিল ২৩.৮২ শতাংশ। এবার কমে ১৮.১৪ শতাংশ হয়েছে।
৬) মুর্শিদাবাদ: গতবার ছিল ২৭.২৩ শতাংশ। এবার কমে ১৬.৫৫ শতাংশ হয়েছে।
৭) মালদা: গতবার ৩৪.৪৮ শতাংশ মানুষ সার্বিকভাবে গরিব ছিলেন। এবার কমে দাঁড়িয়েছে ১৫.৫৭ শতাংশ।
৮) পূর্ব বর্ধমান: এবার শতাংশের বিচারে গরিব মানুষের হার ছিল ১৪.৩২ শতাংশ।
৯) দক্ষিণ দিনাজপুর: গতবার ছিল ২২.৪৮ শতাংশ। এবার কমে দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৭ শতাংশে।
১০) পূর্ব মেদিনীপুর: গতবার ১৪.১৯ শতাংশ ছিল। এবার সামান্য কমে ১২.৪৮ শতাংশে ঠেকেছে।
১১) পশ্চিম বর্ধমান: এবার ১১.২ শতাংশে ঠেকেছে।
১২) দক্ষিণ ২৪ পরগনা: গতবার ছিল ২৮.১ শতাংশ। এবার কমে ১০.৯৬ শতাংশে ঠেকেছে।
১৩) কোচবিহার: গতবার ছিল ২১.৯ শতাংশ। এবার ১০.৩১ শতাংশ হয়েছে।
১৪) জলপাইগুড়ি: গতবার ছিল ২১.৮৩ শতাংশ। এবার ৮.৮৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে।
১৫) নদিয়া: গতবার ছিল ১১.০৭ শতাংশ। এবার কমে ৮.২ শতাংশে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।
১৬) হুগলি: গতবার ছিল ১৪.৯৩ শতাংশ। এবার কমে ৭.৩৬ শতাংশে ঠেকেছে।
১৭) হাওড়া: এবার হাওড়ায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। গতবার ছিল ১২.৮৪ শতাংশ। এবার কমে ঠেকেছে ৬.০৬ শতাংশে।
১৮) দার্জিলিং: গতবার ছিল ১১.৩২ শতাংশ। এবার ৫.৪৫ শতাংশ হয়েছে।
১৯) উত্তর ২৪ পরগনা: গতবার ৯.৮ শতাংশ ছিল। এবার হয়েছে ৪.৩৭ শতাংশ।
২০) কলকাতা: গতবার ২.৭২ শতাংশ ছিল। এবার সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ২.৫৬ শতাংশে।
২১) বর্ধমান: এখন দুটি জেলায় বিভক্ত হয়েছে - পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিম বর্ধমান। ২০১৫-১৬ সালের 'ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে'-তে বর্ধমান জেলায় শতাংশের বিচারে গরিব মানুষের হার ছিল ২০.৩৩ শতাংশ।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: গতবারের পরিসংখ্যান বলতে ২০১৫-১৬ সালের 'ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে'-র তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আর এখনের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে ২০১৯-২০২১ সালের ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’-র ভিত্তিতে। যে রিপোর্ট পেশ করেছে নীতি আয়োগ।)