তাঁর চাল বুমেরাং হয়ে জামিন আটকে গিয়েছে অনুব্রতর। যার জেরে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির পাশাপাশি আদালতের চরম ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে পুলিশকেও। এই পরিস্থিততে বৃহস্পতিবার আসানসোল আদালতে মুখ দেখাতে আসতে পারলেন না অনুব্রতর আইনজীবী তথা বীরভূম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। ফলে এদিন আদালতে অনুব্রতর জামিনের কোনও আবেদন জমা পড়েনি। অন্যান্য দিন অনুব্রতকে আদালতে পেশের সময় অনুগামীদের যে ভিড় দেখা যায়, এদিন দেখা যায়নি তাদের কাউকেই।
ঘটনার সূত্রপাত গত ১৯ ডিসেম্বর। ওই দিন ইডির আবেদনের ভিত্তিতে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরার অনুমতি দেয় রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। পরদিন সকালে অনুব্রতকে হেফাজতে নিতে ইডি অফিসাররা আসানসোল জেলে পৌঁছনোর আগেই সেখানে পৌঁছে যান বীরভূম জেলা পুলিশের আধিকারিকরা। জানা যায়, অনুব্রতর বিরুদ্ধে দুবরাজপুর থানায় প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেছেন শিবঠাকুর মণ্ডল নামে এক তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান। অনুব্রতকে আসানসোল জেল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়ে দুবরাজপুর আদালতে পেশ করে পুলিশ। আদালত অনুব্রতকে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। ওদিকে অভিযোগকারী শিবঠাকুর মণ্ডলের একাধিক বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। এমনকী ঘটনা কবে ঘটেছে তাও ঠিক করে বলতে পারেননি তিনি।
এরই মধ্যে ২১ ডিসেম্বর তৃণমূলের এক সভায় অনুব্রতর আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায়কে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করে, ‘বিজেপি বলছে, অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা রুখতে এই ব্যবস্থা, এটা কি সত্যি?’ জবাবে মলয়বাবু বলেন, ‘হ্যাঁ, ব্যবস্থাই তো। একশো বার। ইডি এবং সিবিআই যেখানে মিথ্যা মামলায় একটা লোককে বিনা দোষে দিনের পর দিন আটকে রাখার চেষ্টা করছে আমরাও চেষ্টা করছি সেই লোকটাকে বাঁচাবার’।
মঙ্গলবার আদালতে অনুব্রতর এই গ্রেফতারিকে হাতিয়ার করেই তাঁর জামিন রুখে দেয় সিবিআই। বুধবারের রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতিরা লিখেছেন, ‘অনুব্রতর প্রশাসনিক প্রভাবও নেহাত কম নয়। যে ভাবে দেড় বছরের পুরনো একটি মামলায় রাতারাতি তাঁর বিরুদ্ধে FIR দায়ের হল। আর আর পুলিশ কোনও তদন্ত না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে গ্রেফতার করতে ছুটল তা সন্দেহের উদ্রেক করে। এখানেই শেষ নয়, পুলিশ হেফাজতে ৭টা দিন কাটিয়েও এসেছেন তিনি।’ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা অস্বচ্ছ ও লজ্জাজনক।
বুধবার আদালতের এই পর্যবেক্ষণের পরে বৃহস্পতিবার আর অনুব্রতর সামনে মুখ দেখাতে যেতে পারেননি মলয়বাবু। কড়া শীতের সকালে প্রবীণ আইনজীবী ঠিক কোথায় রয়েছেন তা যদিও জানা যায়নি, কিন্তু আদালতে দেখা যায়নি তাঁর অনুগামীদেরও।
অনুব্রতর গ্রেফতারির পর থেকে প্রতিবার তাঁকে পেশের পর আদালত কক্ষে কার্যত দরবার বসাতেন তিনি। অনুব্রতর পাশেই দেখা যেত মলয়বাবুকে। এছাড়া আদালতে হাজির অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলতেন কেষ্ট। দল ও সংগঠন নিয়ে নির্দেশ দিতেও শোনা যেত তাকে। বৃহস্পতিবার প্রথবারের জন্য দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য ছবি। শুনশান আদালতে শুনানি শেষে সোজা জেলে ফিরলেন ‘বীরভূমের বাঘ’। জামিনের আবেদন করা তো দূরে থাক, খোঁজ নিতে পর্যন্ত এল না কেউ। ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুব্রতকে আবার জেলে পাঠাল আদালত।