পুরনো অভ্যেস এখনও যায়নি। তাই আগেভাগে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকে সিপিএম–কংগ্রেস জোটে সিলমোহর দিয়েছেন লালপার্টির শীর্ষ নেতারা। সেখানে অবশ্য আটজন সদস্য বাঁধ সেধেছে। সে যাইহোক, জোটের পক্ষে সিলমোহর দিয়ে ভেবেছিলেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবেন। কিন্তু এখন তাঁরাই ভাবতে বসেছেন কংগ্রেস কী করবে?
আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনাও হয়নি। অথচ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ভোটে নামার পক্ষে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। জোট প্রক্রিয়ার মাঝে প্রদেশ কংগ্রেসের এমন কার্যকলাপে নতুন করে ধন্দ দেখা দিচ্ছে বাম শিবিরে। এই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা সম্ভব তা বুঝতে পারছেন না বামেদের পক্ককেশধারীরা।
সিপিআইএম যেমন একদিকে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেমনই বিভিন্ন জেলা থেকে বিধানসভার আসনভিত্তিক হিসেব এসে পৌঁছেছে আলিমুদ্দিনে। তাতে আরও চাপ বেড়েছে আলিমুদ্দিনের কৌশলীদের। কারণ বাম শরিক ছাড়াও কয়েকটি সহযোগী দলকে আসনের ব্যবস্থা করতে হবে সিপিএমকে। কংগ্রেসের সঙ্গে আলোচনার আগে আসনের দাবি–দাওয়া নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব প্রকাশ্যে মুখ খুলছে না।
কয়েকদিন আগে ক্রান্তি প্রেসের বৈঠক নিয়ে বিমান–অধীর তরজা প্রকাশ্যে এসেছিল। তারপর জোটে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সায় দেওয়ায় তাঁদের উপর এখন বড় চাপ। সেখানে প্রদেশ সভাপতিকে ‘মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ করার বিষয়টি কংগ্রেস সামনে নিয়ে আসায় জোটে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘দলের নিচু তলার কর্মী, সাধারণ মানুষ এবং আমারও এটাই মত। অধীরবাবু জনপ্রিয় নেতা। অতীতে রেলমন্ত্রী ছিলেন। এখন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা। তাঁকে মুখ হিসেবে সামনে রেখে লড়লে বাম–কংগ্রেস, দু’পক্ষই সুবিধা পাবে এবং এই সরকারকে উৎখাতে সুবিধা হবে।’
এই বক্তব্যের পরই সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমাদের যা করণীয়, করছি। নমনীয়তাও আছে। কিন্তু আসন সমঝোতা করে লড়তে গেলে দু’পক্ষেই কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এমন কয়েকটি দাবি আগাম ভাসিয়ে দেওয়া উচিত নয়, যাতে সহযোগী শিবিরে ভুল বার্তা যায়।’ শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা আগামী ২৬ নভেম্বরের সর্বভারতীয় ধর্মঘটের সমর্থনে এবং কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদে মঙ্গলবারই কলকাতায় মিছিল করেছে বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলি। কংগ্রেসকে অবশ্য এই মিছিলে ডাকা হয়নি।