স্বামী রিকশা চালান। কিন্তু তাতে সংসারের চলত না। নিজেকেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে রান্নার কাজ করতে হয়। কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সি প্রতিমা পাল। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। যে অঙ্ক বিষয়ে গত পরীক্ষায় তিনি পাশ করতে পারেননি, সেই অঙ্কতেই ৭২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন তিনি।
প্রতিমা খুবই গরিব পরিবারের মেয়ে। দ্বিতীয় শ্রেণির পর তাঁর আর পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সংসারের হাল ধরতে তাঁকেই নামতে হয়। কিন্তু পড়াশোনা করার ইচ্ছেটা তখন থেকেই ছিল। প্রতিমা নিজেই জানান, ‘বিয়ে আগে বা পরে এমনকী বাচ্চা হয়ে গেলেও মনে মনে ইচ্ছে ছিল, মাধ্যমিক পাশ করতেই হবে। সেইমতো খোঁজখবর নেওয়াও শুরু করে দিই।’ কথা বলে জানতে পারে নিবেদিতা নৈশ স্কুলের কথা। সেখানে শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করে তাঁর সপ্তম শ্রেণিতে ভরতি হওয়া ও একটি মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসা। একইসঙ্গে প্রতিমা জানান, সব বিষয়ে পাশ করতে পারলেও অঙ্কে পাশ করতে পারেননি। ২০১৩ সালে অঙ্কে পাশ করতে না পেরে ফের পরের বছর পরীক্ষায় বসেন। কিন্তু ফল তখনও খারাপ হয়। তাতেও হাল ছাড়েননি। চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।
এরপর পাটুলির রোকেয়া শিক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন প্রতিমা। গত সপ্তাহে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে ৭২ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছেন তিনি। প্রতিমার এই সাফল্যে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তাঁর শিক্ষক সুশোভন নায়েক। তিনি জানান, ছেলেকে নিয়েই পড়তে আসতেন প্রতিমা। বাস্তব জীবনের উদাহারণ দিয়ে বোঝালে তিনি খুব সহজেই বুঝতে পারতেন। আজ তাঁর এই সাফল্য নিজের চেষ্টার জোরেই।