গত কয়েক বছরে আমূল পরিবর্তন হযে গিয়েছে বাগদার মামাভাগ্নের শক্তিগড়পল্লি। আজ এই গ্রাম সংবাদ শিরোনামে। তবে সাফল্যে নয়। নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে সুকুমার রায় বর্ণিত, ‘ছিল রুমাল হয়ে গেল বিড়াল’ কথার মিল খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। কারণ স্থানীয় মানুষজনের মুখে মুখে বদলে গিয়েছে গ্রামের নামও। শক্তিগড়পল্লিকে এখন স্থানীয় বাসিন্দারা ‘মাস্টার গ্রাম’ নামে চেনে। যা নিয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
কেন নাম হয়েছে ’মাস্টার গ্রাম’? এখানেই বাস করতেন চন্দন মণ্ডল ওরফে ‘সৎ রঞ্জন’। যিনি এখন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আপাতত সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন। শুক্রবার তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। তার পর থেকে গোটা গ্রামে থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কারণ গত কয়েক বছরে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে চাকরি পেয়েছেন এই গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। টাকার সঙ্গে রঞ্জনের হাতযশেই সেই চাকরিগুলি জুটেছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। তাই অনেকেই এখন চাকরি হারাবার ভয়ে তটস্থ।
ঠিক কী ঘটেছে শক্তিগড়পল্লিতে? স্থানীয় সূত্রে খবর, সালটা ২০১৩। এলাকায় রঞ্জনের ‘সুনাম’ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও কাজ শুরু বাম জমানায়। টাকার বিনিময়ে চাকরি কিনতে দূর–দূরান্ত থেকে অনেকে হাজির হতেন। তবে স্থানীয়দেরই অগ্রাধিকার দিতেন চন্দন মণ্ডল। শক্তিগড়পল্লির ঘরে ঘরে চাকরি পৌঁছে দিয়েছেন সৎ রঞ্জন। এই গ্রামের প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারেই কেউ না কেউ শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন এবং করছেন। এই এলাকায় গিয়ে মাস্টার গ্রাম জানতে চাইলে যে কেউ দেখিয়ে দেবেন। এই গ্রামে একসময় প্রায় সকলেই চাষবাস করতেন। এখন এই গ্রামে ১০০ জনের বেশি শিক্ষক আছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। এতটাই পরিবর্তন হয়েছে।
তাহলে জনপদ থমথমে কেন? হঠাৎই এই গ্রামের ঈশান কোণে আতঙ্কের কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। অবৈধভাবে নিয়োগ হওয়া কয়েকজন গ্রুপ–ডি কর্মী সদ্য চাকরি খুইয়েছেন। রঞ্জন গ্রেফতার হতেই আরও অনেকের চাকরি হারানোর ভয় দেখা দিয়েছে। স্কুলে চাকুরিরত গ্রামবাসীদের প্রায় সবাই বিপুল অর্থের বিনিময়ে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। অনেকে টাকা দিতে গিয়ে চাষের জমি বিক্রি করেছেন। কেউ বসতবাড়ি বেচে দিয়েছেন সন্তানের ভাল চেয়ে। সেই চাকরি বহাল থাকবে তো? এই চিন্তায় এখন থমথমে বাগদার জনপদ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘গ্রামবাসীদের কাছে চন্দন মণ্ডল ওরফে সৎ রঞ্জন ছিলেন সাক্ষাৎ ভগবান। তাঁকে ধরেই সকলের চাকরি হয়েছে। প্রত্যেক বছর কালীপুজোয় চন্দনের বাড়িতে বিশাল অনুষ্ঠান হয়। সেখানে অনেক ভিভিআইপি আসেন।’