ঘূর্ণিঝড় আমফানে ধুয়েমুছে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক নদীবাঁধের বিস্তীর্ণ অংশ, যার ফলে বানভাসি হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু গ্রাম। কৃষিজমি ও মাছের ভেড়ি ডুবে গিয়ে ক্ষতি কয়েকশো কোটি টাকার।
বুধবার সুপার সাইক্লোনের তাণ্ডবে বিদ্যাধরী নদীতে প্রায় ৪ মিটার উঁচু ঢেউয়ের ধাক্কায় ভেঙে পড়ে বাঁধের প্রায় ৪০ ফিট অংশ। শুক্রবার সকালে দেখা গিয়েছে, বাঁধ সারাতে হাত লাগিয়েছেন সংলগ্ন উচিলদহ গ্রামের প্রায় ৫০০ অধিবাসী। বুধবার রাতে গ্রামে বিদ্যাধরীর জল ঢুকে মসস্ত মাছের ভেড়ি প্লাবিত করেছে, ভেঙে পড়েছে সব কাঁচাবাড়ি। কোনও মতে মাথা তুলে রয়েছে গুটিকয় পাকা ভিটে।
পাশাপাশি ঝড়ের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একাধিক সেতু ও কালভার্ট, উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার। এর জেরে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা এলাকার বহু গ্রাম।
একই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার আর এক গ্রাম আটপুকুরের। বসিরহাট মহকুমার মিনাখাঁ বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই গ্রামেও বাঁধভাঙা নদীর বানে ভেসে গিয়েছে ঘরদোর, বিপুল ক্ষতি হয়েছে চাষজমির।
নদীবাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ ও ক্যানিং মহকুমা থেকেও। অমাবস্যার বাসে শুক্রবার রাতে নতুন বিপদ ঘনিয়েছে সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলের অসংখ্য জনপদে। সর্বস্বান্ত মানুষ দিশাহারা হয়ে সরকারি ত্রাণের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।
সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাত জানিয়েছেন, ইছামতী, বিদ্যাধরী, দাশা, মাতলা, রায়মঙ্গল ও বেতনি নদীর বাঁধ অধিকাংশই ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে পড়েছে। অন্য দিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা কাজ না করায় খবর মেলেনি সুন্দরবনের প্রান্তিক গ্রামগুলির। পঞ্চায়েতের তরফে বাঁধ মেরামতির চেষ্টা চলেছে, তবে তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। দুর্যোগে প্রাণহানি রুখতে শুত্রবার সকালেই গ্রামের সমস্ত পরিবারকে সরিয়ে আনা হয়েছে ত্রাণশিবিরে।
মাতলা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, কুলতলি ও গোসাবা ব্লকের অসংখ্য গ্রাম। মোট ১১ জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে বিদ্যাধরীর। সন্দেশখালিতে নদীবাঁধ ধ্বংস হয়েছে ১৫ জায়গায়। বানের জলে ভেসে গিয়েছে ভেড়ির বাগদা, গলদা ও ভেটকি। ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে দাবি মিনাখাঁর প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাথমিক দফায় ৩৫০ আশ্রয়শিবিরে দুর্গতদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। পরে আরও ১০০টি শিবির তৈরি হয়েছে।