গান্ধী জয়ন্তীতে রাজঘাটে সাদা টুপি পরে ভিড় করে দেসের সবচেয়ে বড় চোরেরা। শুক্রবার এমনই বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিতর্ক উসকে দিলেন বিশ্বভারতীয় উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তী।
এ দিন শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, ‘২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীতে রাজঘাটে ঢোকা যায় না। কারণ সেখানে মাথায় সাদা টুপি পরে দেশের সবচেয়ে বড় চোরেরা জড়ো হয়। আর সারা বছর এমনই সব কাজ করে তারা, যা গান্ধীজি সর্বদা প্রতিবাদ করতেন।’
তিনি বলেন, বিশ্বভারতী এখন ধুঁকছে এবং কার্যত কৃত্রিম জীবনদায়ী চিকিত্সা প্রক্রিয়ায় বেঁচে রয়েছে। উপাচার্যের দাবি, ‘স্থানীয় ব্যবসায়ী, যাদের সহ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও যোগ নেই, তারা এসে উপাচার্যকে নিগ্রহ করে যায়।’
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু বড় মাপের বিতর্ক বিশ্বভারতীতে দানা বেঁধেছে। পাশাপাশি ছাত্রগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও প্রায়ই ঘটছে। এছাড়া, সংশোধনী নাগরিকত্ব আইন সম্পর্কে ভাষণ দিতে বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিতর্কে ঘৃতাহূতি দিয়েছেন উপাচার্য নিজে। তার জেরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা।
সাধারণতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরে সিএএ-এর সমর্থনে তাঁর ভাষণের ভিডিয়ো রেকর্ডিং করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার অভিযোগে এক পড়ুয়াকে ছাত্রাবাস থেকে বহিষ্কারও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ দিন তারই জের টেনে উপাচার্য বলেন, ‘আমি জানি অনেকেই এখানে ভিডিয়ো রেকর্ড করছেন এবং অনেকেই সেগুলি ভাইরাল করবেন। কিন্তু দয়া করে নিজেদের হৃদয় কাজে লাগান।’
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘আসলে আয়না নিজের প্রতিবিম্ব দেখেছেন বলেই এমন মন্তব্য করছেন উনি।’
অন্য দিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ‘উনি একজন অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান মানুষ। কোনও বে-ফাঁস কথা উনি বলেন না। এমন কথা বলার আগে উনি নিশ্চয় চিন্তা করেছেন। তবে কেন এই কথা তিনি বলেছেন, তা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন। কংগ্রেস শাসনে যে হারে দুর্নীতি বেড়েছিল, তাতে অনেকেই দুর্ভোগে পড়েছেন। ওঁর তেমন কোনও অভিজ্ঞতা থাকতে পারে।’
এই বিষয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘এ অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। উনি কী বলেছেন তা সঠিক না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’
তবে এ দিন উপাচার্য এতেই না থেমে বলেছেন, ‘বিশ্বভারতী কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অন্যতম স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধ্যাপক, ব্যবসায়ী ও সংবাদমাধ্যম, সকলেরই এখানে কর্মসংস্থান হয়। এ অনেকটা সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো। আমি জানি আগামিকালই সংবাদমাধ্যমে এ সব প্রকাশিত হবে। কিন্তু তাতে ভয় পাই না। যত অপমানই করা হোক, যে কাজের জন্য এখানে এসেছি, তা করব। সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু অধ্যাপক আমাকে অপমান করবেন। কিন্তু তাতে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না।’