দেড় মাসের ব্যবধানে দুই অবিবাহিত বোনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল আসানসোলে। গোপনে দেহ সৎকার করতে গিয়ে আটক করা হল দাদাকে। বুধবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের বার্ণপুরের সাঁতাডাঙ্গার সারদাপল্লীতে। প্রথম বোনের মৃত্যুর পর তাঁর দেহ গোপনে সৎকার করে দিয়েছিল দাদা। পড়শিদের সন্দেহ হলেও তখন তেমন কোনও অভিযোগ করেননি কেউ। কিন্তু দ্বিতীয় বোনের দেহও গোপনে সৎকার করতে গিয়েই আত্মীয়, প্রতিবেশীদের হাতে ধরা পড়ে যায় ওই ব্যক্তি।
এর পরেই তাকে চেপে ধরেন তাঁরা। কীভাবে বোনের মৃত্যু হল? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে না পারায়, তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় বাসিন্দার। ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করে তদন্তে নেমেছে হিরাপুর থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, এদিন সকালে গাড়িতে করে এক বোনের মৃতদেহ শ্মশানে সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল দাদা। সেই সময় প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে হিরাপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরে পুলিশ সেই মৃতদেহ উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। একইসঙ্গে মৃতার দাদাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম সোমা ওরফে সীমা পাল(৫২)। আসানসোলের সারদাপল্লীর সাঁতাডাঙ্গায় এলাকারই বাসিন্দা বিধানচন্দ্র পাল৷ বাবা, মা আগেই মারা গিয়েছেন৷
মৃতার খুড়তুতো ভাই প্রণব পাল এদিন বলেন, ‘জ্যাঠা প্রভাকর পালের এক ছেলে ও দুই মেয়ে সাঁতাডাঙ্গায় তিনতলা বাড়িতে থাকে। বিধান পাল, শম্পা পাল ও সোমা পাল তিনজনই অবিবাহিত। গত ১৪ এপ্রিল এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানতে পারি বড় মেয়ে শম্পা পাল মারা গিয়েছেন। বিধান চুপিসাড়ে গভীর রাতে গাড়ি করে তাঁর মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দেয়। খবর শুনে বিধান পালকে জিজ্ঞেস করায়, প্রতিবেশীদের সে জানিয়ছিল শম্পা নিখোঁজ। আবার পরে বিধান বলেছিল, সে মারা গিয়েছে।
এদিন সকালে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে প্রণববাবু জানতে পারেন যে, বিধানের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়, সেই গাড়িতে কোনও মৃতদেহ তোলা হবে। খবর পেয়ে প্রণব গিয়ে দেখেন তাঁর ছোট বোন সোমার মৃতদেহ গাড়িতে তোলা হচ্ছে। এরপর এলাকার বাসিন্দারা সেই গাড়ি আটকে হিরাপুর থানায় খবর দেন। বিধান পাল তখন তাঁদের বলে, ‘বোন অসুস্থ ছিল।ঘরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে।
মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধান কোনও কাজ করত না। অনলাইনে জুয়া খেলত।পরিবারের অভিযোগ, সম্পত্তির লোভেই দুই বোনকে খুন করে থাকতে পারে বিধান।
জেলা হাসপাতালে সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্বাসরোধের কারণে ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। যদিও পুলিশের কাছে বিধান পাল দাবি করে, তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার বোনের মৃত্যু হয়েছে। বিধান এও দাবি করে যে, তার কাছে বোনের ডেথ সার্টিফিকেটও রয়েছে। হিরাপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের হাতে এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। সেই অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।