সুজাতা মণ্ডল—এই নামটিই এখন যথেষ্ট রাজ্য–রাজনীতিতে। যদিও তিনি কোনও নির্বাচনে জয়ী হননি। তবে জিততে সাহায্য করেছিলেন নিজের স্বামীকে। এখন অবশ্য সে সম্পর্ক অতীত। বিজেপির সাংসদ হয়ে যেতেই দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। তাই স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সুজাতা মণ্ডল। আর যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। এই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর বিবাহবিচ্ছেদ হয় বিজেপি সাংসদ তথা স্বামী সৌমিত্র খাঁয়ের সঙ্গে। একুশের নির্বাচনে জিততে পারেননি সুজাতা। তবে এবার তাঁকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী করল তৃণমূল কংগ্রেস। বাঁকুড়ার ৪৪ নম্বর জেলা পরিষদ আসন থেকে টিকিট দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল তৃণমূল কংগ্রেস। যা এককথায় বড় খেলা বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে সুজাতা মণ্ডল প্রার্থী হতেই বিজেপি বেশ চাপেই পড়েছে। কারণ একদিকে বিজেপির সংগঠন নড়বড়ে। তার উপর সুজাতা গ্রামের রাজনীতিটা বোঝেন। আবার তিনি মহিলা মুখ। সেদিক থেকে অনেকটা অ্যাভানটেজে রয়েছেন সুজাতা মণ্ডল। এখানে জয়পুর ব্লকে তিনটি জেলা পরিষদ আসন আছে। তার মধ্যে একটিতে প্রার্থী হয়েছেন সুজাতা মণ্ডল। তাহলে কি জিতবেন সুজাতা? এই প্রশ্ন উঠছে কারণ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সুজাতা আরামবাগ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হযেছিলেন। কিন্তু হারতে হয় সুজাতাকে। এবার সেটার বদলা তিনি বাঁকুড়া থেকে নিতে চান। এখানে বিজেপিকে পরাজিত করতে পারলেই খেল খতম।
অন্যদিকে সুজাতা মণ্ডল রাজ্যের এবং জেলার সংগঠনের কাজ করে আসছিলেন। তাতে তিনি বুঝতে পেরেছেন বিজেপি চিৎকার করলেও মানুষ তাদের সঙ্গে নেই। কিন্তু মানুষ যাতে সিপিএম বা কংগ্রেসের দিকে ঘুরে না যান তার জন্যই তিনি এখানে জোর লড়াই শুরু করে দিয়েছেন। একাধিক জেলায় ছোট–বড় কর্মসূচি নিয়ে সুজাতা এখন জেলার রাজনীতিতে বেশ পোড়খাওয়া হয়ে উঠেছেন। এখন তিনি সুন্দর বক্তাও। সেটা শোনা গিয়েছিল বাঁকুড়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায়। সেখানে সুজাতা মণ্ডলকে বক্তব্য রাখতে দেখা গিয়েছিল। দল যে তাঁর পাশে আছে সেটা দেখা গিয়েছিল অভিষেক যখন সৌমিত্রকে তোপ দেগে বলেছিলেন, ‘ঘরের লক্ষ্মীকে সামলে রাখতে পারে না, তাঁর আবার বড় বড় কথা।’
তাহলে বিষয়টি কেমন দাঁড়াল? সুজাতা মণ্ডলকে প্রার্থী করে বিজেপিকেই বার্তা দিল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি সাংসদের ঘরের বধূকে প্রার্থী করে আসলে সিঁদ কাটতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস। একমাত্র সুজাতাই জানে কোন তিরে বিদ্ধ হবে বিজেপি। কারণ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মামলার জেরে জেলায় ঢোকার অনুমতি ছিল না সৌমিত্র খাঁয়ের। তখন স্বামীকে জেতাতে প্রচারে নেমেছিলেন সুজাতাই। কিন্তু সেই স্বামীই যোগ্য সম্মান স্ত্রীকে না দেওয়ায় ঘর ভেঙে যায়। তারপর থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসেই আছেন সুজাতা মণ্ডল। এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকেই আস্তিনের লুকিয়ে রাখা তাসকে সামনে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। এখন দেখার জয়ের হাসি সুজাতা হাসেন কিনা।