সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকার। এবার এই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে বড়সড় জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসল। চিকিৎসার নাম করে তুলে নেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের টাকা। এমন অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় এই ধরনের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ইতিমধ্যেই দু'জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা দুজনেই এজেন্ট।
কীভাবে হচ্ছে এই জালিয়াতি?
পুলিশ জানতে পেরেছে, এই জালিয়াতি চক্রে বড় ভূমিকা রয়েছে এজেন্টদের। তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় মহিলাদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছেন। মহিলারা তখন সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে গিয়ে সেই টাকা তুলে নিচ্ছেন। আর সেজন্য অবশ্য কোনও চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার তাঁদের করতে হচ্ছে না। নার্সিংহোমের মাধ্যমে সেই টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে উপভোক্তাদের হাতে। আর প্রতি উপভোক্তা বাবদ এজেন্টরা ১০ থেকে ১৭ হাজার টাকা করে পেয়ে যাচ্ছেন। তেমনই মোটা টাকা পাচ্ছে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ যে দুই এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে, তাঁরা সম্পর্কে শাশুড়ি এবং জামাই। ধৃতদের নাম সালেহারা বিবি এবং মুন্সি নুর আলম। তাঁরা রীতিমতো গ্রামে গ্রামে গিয়ে উপভোক্তাদের প্রলোভন দেখাত বলে জেরায় প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ উঠেছে, এই নার্সিংহোমে মাধ্যমে টাকা তুলে উপভোক্তাদের দেওয়া হত। যদিও নার্সিংহোমের মালিক আবির গুহ এই অভিযোগকে পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাফুলিয়া, পঞ্চাননতলা, দূর্গাগ্রাম প্রভৃতি এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত ৩০ জন উপভোক্তাকে ওই নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছেন এজেন্টরা। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এক উপভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে। রাজিয়া বিবি নামে গাফুলিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা টাকা নিতে নার্সিংহোমে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে প্রাপ্য টাকা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন। এই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসে। হাসপাতাল থেকে পুলিশ বহু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড উদ্ধার করেছে সেই সঙ্গে হাসপাতালে বেশ কিছু হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছে।
পুলিশ সুপার কামনাশিশ সেনের মতে, এটা বড় একটা কেলেঙ্কারি। এই অভিযোগ আসতেই স্বতঃপ্রণোদিত হবে মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা।