২০১৬ সাল। পার্শ্ব শিক্ষকের চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের শালবনী গ্রামের বাসিন্দা প্রশান্ত মাণ্ডি। আর বাড়ি ফিরে এলেন যে মানুষটা তিনি যেন সেই আগের প্রশান্ত মাণ্ডি নন। একেবারে বিধ্বস্ত একজন মানুষ। তীব্র হতাশা যেন গ্রাস করেছে প্রশান্তকে। এতদিন তিল তিল করে অর্জন করা শংসাপত্র একে একে পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি। এরপর থেকে তীব্র মানসিক অবসাদে আরও নিজেকে গুটিয়ে নিলেন মেধাবী প্রশান্ত।
পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করার পরে একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে চাকরির পরীক্ষা দেওয়া শুরু করেছিলেন প্রশান্ত। কিন্তু সেদিনের ইন্টারভিউটা যেন জীবনের সব আশাকে একেবারে শেষ করে দিয়েছিল। কী হয়েছিল সেই ইন্টারভিউতে আর কিছুই বলতে পারেননি প্রশান্ত। ছেলেকে এভাবে অবসাদগ্রস্ত দেখে আরও বেশি ভেঙে পড়েছিলেন প্রশান্তর বাবা। মাস কয়েক আগে মারা গিয়েছেন বাবা। এদিকে ছেলেকে চিকিৎসার করানোর মতো আর্থিক অবস্থাও নেই প্রশান্তর মায়ের। মাঝেমধ্যেই এদিক ওদিক বেরিয়ে যাচ্ছিলেন অসুস্থ প্রশান্ত। এবার সেই প্রশান্তকেই পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছেন মা ভারতী মাণ্ডি। একেবারেই মন চায়নি ছেলেকে এভাবে বেঁধে রাখতে। তবু আর কোনও পথ পাননি হতদরিদ্র অসহায় মা। সরকারি আবাস যোজনার ঘর কিংবা সরকারি সহায়তার ছিটেফোঁটাও মেলেনি।
ভারতী মাণ্ডি বলেন, ‘ইন্টারভিউ দিয়ে এসেই সব সার্টিফিকেটগুলো উনুনে ঢুকিয়ে দিল। এরপর থেকেই ওইরকম হয়ে গেল। ছেলেকে কবিরাজ, ডাক্তার সব দেখিয়েছি। কিছু হয়নি। স্বামী স্ত্রী কাজ করে ছেলেকে বড় করার চেষ্টা করেছিলাম।স্বামীও মারা গেল। ছেলেটা বার বার পালিয়ে যাচ্ছিল। সেকারণে বেঁধে রেখেছি। কেউ সহায়তা করে না।’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘ওর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেব। সরকারি সহায়তা চায়নি ওরা। ওদের এরকম অবস্থা তো কেউ জানে না।’