এটাই প্রত্যাশিত। এক জায়গায় দু’জন যুযুধান প্রতিপক্ষ থাকতে পারে না। তাই শান্ত পাহাড়ের পেনাল্টি বক্সে জ্বলন্ত গোল দেওয়া বিমল গুরুং ফিরতেই অশান্তির আবহাওয়া তৈরি হয়েছে।
গোর্খাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা। কিন্তু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত যাকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সবটাই তিনি পূর্ণ করেছেন। এই কথা বলে পুজোর মুখে ফেরার বিমল গুরুং বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করে প্রকাশ্যে এসেছেন। এমনকী আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাঁধতে চান বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আর তৃতীয় বারের জন্যও মমতাকেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চান বলে তিনি জানিয়েছেন।
আর তারপরেই পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ নিমেষে পাল্টে গিয়েছে। অনেক অঙ্ক বদলে যেতে পারে বিধানসভা ভোটে। এদিকে বিমল গুরুংয়ের কামব্যাক, বিমল গুরুং–বিনয় তামাং যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে দার্জিলিংয়ে।
মোর্চা সভাপতি বিনয় তামাং রবিবার শান্তিমিছিলের ডাক দিয়েছিলেন চকবাজারে। মিছিল মোটের উপর শান্তিপূর্ণ হলেও বিমল গুরুং-বিরোধী মিছিলে যে আওয়াজ উঠল বা বার্তা দেওয়া হল তা কার্যত অশান্তির মেঘের ঘনঘটা পাহাড়ে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ সেখান থেকেই ডাক উঠেছে, পাহাড়ে যারা অশান্তি করেছিল, তাদের আর পাহাড়ে ফেরার প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য, বিমল গুরুংয়ের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পাহাড়। কিন্তু তারপর দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের উপর গা–ঢাকা দিয়েছিলেন বিমল গুরুং–রোশন গিরিরা। পুলিশের সাব-ইনস্পেক্টর অমিতাভ মালিকের খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে নাম উঠে আসে গুরুংয়ের। তাঁর বিরুদ্ধে ঝুলছে ইউএপিএ–সহ একাধিক ফৌজদারি মামলা। তবে আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশের খাতায় বিমল গুরুং এখনও ফেরার।
দুর্গাপুজোর ভরা মরশুমে কলকাতায় এসে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের পথ হল গোর্খাল্যান্ড। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের এই দাবিকে যারা সমর্থন জানাবে, আমরা তাদেরই পাশে থাকবো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন যাকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা তিনি পালন করেছেন। তিনি আদর্শ নেত্রী। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে হারাব। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতাকেই দেখতে চাই।’
এখন প্রশ্ন, তাহলে বিনয় তামাং কী করবেন? পাহাড়ের ক্ষমতাসীন বিনয় তামাং গোষ্ঠীর সঙ্গে গুরুংদের আদৌ বনিবনা হবে কি না, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিনয় তামাং গোষ্ঠী এই মিছিল করে বুঝিয়ে দিয়েছে, গুরুং পাহাড়ে ফিরলে উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে দার্জিলিং। সুতরাং পাহাড়ে শান্তি স্থাপনে বিকল্প পথ এখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকেই ভাবতে হবে।