চিতাবাঘ যে মানুষকে আক্রমণ করে, সেই বিষয় নিঃসন্দেহ সবাই জানেন। তবে এবার সম্পূর্ণ উল্টো অভিজ্ঞতা হল দার্জিলিংয়ের এক পরিবারের। 'শান্ত' চিতাবাঘের কবলে পড়লেন দার্জিলিংয়ের সোনাদা এলাকার মুন্ডা চা-বাগান সংলগ্ন একটি বাড়ির গৃহস্থরা।
আক্রমণ করা তো দূরের কথা, উল্টে আদর খেয়ে ঘরের মধ্যে লুটোপুটি খেল সে। বুনো চিতাবাঘের এই 'শান্ত' আচরণ দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে গোটা পরিবার। কেউ মাথায় হাত বুলিয়েছেন, তো কেউ তার গায়ে আলতো আদর করে দিয়েছেন। তবে কাউকে আক্রমণ করার কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি তার মধ্যে। বরং পোষ্যদের মতো আচরণ করেছে চিতাবাঘটি। নির্বিকারে আদর খেয়ে ঘরের মধ্যেই গড়াগড়ি খেয়েছে সে।
অবশ্য বনদফতরের কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তবে সেই জায়গা ছেড়ে উঠতে একেবারেই নারাজ চিতাবাঘটি। তাকে ধরে নিয়ে যেতে যথেষ্ট কসরত করতে হয়েছে বনকর্মীদের। একজন বনকর্মীর পায়ে থাবাও বসিয়ে দেয় সে। পরে তাকে ধরে জোড় বাংলো রেঞ্জের দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই ওই চা বাগান অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করছিল একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ। বিষয়টি জানতে পেরে তারা খাঁচা পাতলেও তাতে ধরা পড়েনি চিতাবাঘটি। স্থানীয়দের চেষ্টায় তাকে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার পর তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে।
শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দার্জিলিংয়ের সোনাদা এলাকার মুন্ডা চা-বাগান অঞ্চলের একটি গৃহস্থের বাড়িতে। এদিন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটি পূর্ণবয়স্ক চিতাবাঘ ওই বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তবে বাড়ির মধ্যে ঢুকেও কারও কোনও ক্ষতি করেনি সে। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের মধ্যে চিতাবাঘ দেখে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েন বাড়ির লোকজন। কীভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাবেন, সেই চিন্তা করতে থাকেন পরিবারের লোকেরা। তবে ওই চিতাবাঘকে ঘরের এক কোনায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখেন ওই বাড়ির সদস্যরা। পরিবারে কয়েকজন সদস্য সাহস যুগিয়ে এগিয়ে যান চিতাবাঘের কাছে। আলতো করে তার গায়ে হাত বোলাতেই আদর খেতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে চিতাবাঘটি। তখন মনে একটু বল পান পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
এই খবরটি জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। চিতাবাঘটিকে দেখতে ছুটে আসেন এলাকার বাসিন্দারা। ঘরের মধ্যে মোবাইলের ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে ভরে ওঠে। কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে ছবিও তোলেন। তবে বিরক্ত হতে দেখা যায়নি বাঘটিকে। উল্টে সমস্তটাই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে সে। চিতাবাঘের এই আচরণ দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন বনকর্মীরাও। সচরাচর এমন দৃশ্য অত্যন্ত বিরল বলেই মনে করছেন তাঁরা।