বর্ধমান শহরের শতাব্দীপ্রাচীন কার্জন গেট তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্জন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে এমনই দাবি করলেন যুব তৃণমূলের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। বুধবার বিকেলে সায়নীর এই মন্তব্যে বর্ধমান শহরের ইতিহাস নিয়ে তাঁর প্রজ্ঞা নিয়ে হাসাহাসি শুরু হয়েছে শহরে। যুব তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা।
বুধবার বিকেলে কার্জন গেটের সামনে ছিল যুব তৃণমূলের সভা। সেই সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সায়নী নিজেই। তখনই তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন ১২ বছরে কী হয়েছে? (কার্জন গেট দেখিয়ে) ১২ বছর আগে ছিল এই গেট? ছিল এত ঝলমলে আলো? ছিল এরকম ঝাঁ চকচকে রাস্তা? মানুষকে গিয়ে এটাই বলুন।’
সায়নীর এই বক্তব্য ঘিরে হাসাহাসি শুরু হয়েছে শহরে। শিক্ষক, অধ্যাপক থেকে সাধারণ মানুষ, তৃণমূলনেত্রীর বর্ধমান শহরের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞানের গভীরতায় হতবাক। কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন, ‘আমি আশ্চর্য নই। তৃণমূল মানেই অশিক্ষার চাষ। বর্ধমান শহরের ইতিহাস জানে না ওদিকে মঞ্চে জ্ঞান দিতে উঠে গেছে।’ বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘তৃণমূল মানে পিসি বা ভাইপোর চটি চাটো। তার বাইরে কিছু জানার তো কোনও দরকার নেই। সায়নী সেই ঝাড়েরই বাঁশ। তার থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করি না।’
বর্ধমানের মহারাজ বিজয়চাঁদ মহাতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষ্যে ১৯০৪ সালে শহরের প্রবেশপথে তৈরি হয়েছিল এই কার্জন গেট। গেটটির উদ্বোধন করেছিলেন খোদ ভাইসরয় লড কার্জন। প্রথমে গেটটির নাম ছিল ‘স্টার গেট অফ ইন্ডিয়া’। পরে কার্জনকে তুষ্ট করতে তার নামকরণ করা হয় ‘কার্জন গেট’। স্বাধীনতার পর গেটটির নাম হয় বিজয় তোরণ।
ইতিহাস বলছে, ১৯০৩ সালে রাজ্যাভিষেক হয়েছিল মহারাজা বিজয়চাঁদ মহাতাবেরই। তখনই গেট তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি। দায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যাকিনটোস বার্ন কোম্পানিকে। তাদের ইঞ্জিনিয়াররাই মহারাজের সঙ্গে আলোচনা করে গেটের নকশা তৈরি করেন। ৩০ ফুট গভীর গর্ত খুড়ে গাঁথা হয় ভিত। প্রায় ১ বছরে শেষ হয় নির্মাণকাজ। ১৯০৪ সালের ৪ এপ্রিল বর্ধমান শহর সফরকালে এই গেটের উদ্বোধন করেন লর্ড কার্জন। নাম করণ হয়, ‘স্টার গেট অফ ইন্ডিয়া’। তবে কয়েক বছরের মধ্যেই তাঁকে তুষ্ট করতে গেটটির নাম ‘কার্জন গেট’ দেন মহারাজ। স্বাধীনতার পরে মহারাজের নামে গেটের নাম হয় বিজয় তোরণ।