করোনা মহামারীর জেরে ২০২০–এর মার্চ থেকে দীর্ঘ ১১ মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে আজ, শুক্রবার থেকে খুলছে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলি। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘আজ থেকেই স্কুলগুলি খুলে যাচ্ছে। আপাতত নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে শুরু হচ্ছে পঠন–পাঠন। ধাপে ধাপে অন্য শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস শুরু হবে।’
পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩৬ হাজার সরকারি ও সরকার পোষিত মাধ্যমিক স্কুল, প্রায় ১৪ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল এবং ৬৩৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ স্কুলেই সরস্বতী পুজো হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল করতে একাধিক বিধিনিষেধ মানতে হবে। এ সংক্রান্ত ৫০ পাতার একটি নির্দেশিকাও জারি করেছে রাজ্য সরকার।
শিক্ষা দফতরের ওই আধিকারিক আরও জানান, ‘রাজ্যের প্রতিটি স্কুলে ওই নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে কী করতে হবে এবং কী করা উচিত নয় তা বলা রয়েছে ওই নির্দেশিকায়। সংক্রমণ রুখতে শিক্ষক–শিক্ষিকা, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের কী ভূমিকা নেওয়া উচিত সে ব্যাপারেও বিস্তারিত জানানো হয়েছে। স্কুল শুরুর আগে এবং স্কুল চলাকালীন কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে সেটাও বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।’
নির্দেশিকায় বলা রয়েছে— স্কুল চলাকালীন শিক্ষক–শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষাকর্মী— সকলকেই মাস্ক পরতে হবে, স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধি। প্রতিটি স্কুলে একটি পৃথক আইসোলেশন রুম রাখার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। কোনও পড়ুয়া অসুস্থ হলে বা তার মধ্যে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে সেখানে রাখা হবে তাঁকে।
আরও বলা হয়েছে, নিয়ম করে কিছু সময়ের ব্যবধানে গোটা স্কুল স্যানিটাইজ করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের মধ্যে বই বা টিফিন ভাগ করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একসঙ্গে জড়ো হয়ে প্রার্থনা করা যাবে না। প্রতিটি ক্লাসে আলাদা করে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। পাশাপাশি জানানো হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের ওপর সবসময় নজর রাখতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
এই নির্দেশিকায় ব্যাপারে এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘বিশদে দেওয়া হয়েছে এই নির্দেশিকা। তবে রাজ্যের স্কুলগুলিতে সীমিত পরিকাঠামোয় এর প্রতিটি নির্দেশ অনুসরণ করা খুবই কঠিন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্কুলের সাফাইকর্মীদের স্যানিটাইজেশন এবং বর্জ্য নিষ্কাশনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে। কিন্তু রাজ্যের বেশিরভাগ স্কুলেই কোনও সাফাইকর্মী নেই। গত কয়েকবছর ধরে সাফাইকর্মীর পদ খালি পড়ে রয়েছে।’
গত বছর অক্টোবর মাসেই স্কুল খোলার পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সে সময় পুজো–উৎসবের মরশুম থাকায় এবং করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তর জেরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। যদিও বিগত কয়েক মাস ধরে দৈনিক সংক্রমণ অনেকটাই কমে গিয়েছে রাজ্যে। গত বছর নভেম্বর মাসে যেখানে প্রতিদিন কমবেশি ৪০০০ জন আক্রান্ত হতেন, এখন সেই সংখ্যা নেমে এসেছে দুশোয়। দৈনিক মৃত্যুও ৬০ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে এসেছে।
এদিকে, রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি খোলার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘কলেজগুলিতে বিভিন্ন দফতর খোলাই রয়েছে। অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে সেমেস্টারের পরীক্ষা। বুধবার আমরা রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনা করে কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ নেব।’ উল্লেখ্য, গত বছর ১৬ মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজা বন্ধ রয়েছে।