ইউনেস্কো–ঘোষিত পৃথিবীর অন্যতম হেরিটেজ সুন্দরবন আজ বিপন্ন। বিশ্বের একমাত্র বাঘের প্রজাতি যারা ম্যানগ্রোভেই থাকে তাদের ঘর এই ১০,২০০ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী গহন অরণ্য। আর সেটিরই বাস্তুতন্ত্র আজ ভেঙে পড়ার মুখে। এমনই জানিয়েছে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরের বৈজ্ঞানিকদের দল।
সুন্দরবনের ভবিষ্যত নিয়ে অক্সফোর্ড ও গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়–সহ বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করা গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এলসিভিয়ার গোষ্ঠীর বায়োলজিক্যাল কনভার্সেশন জার্নালে। সুন্দরবনের ৪২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পড়ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং ৬০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে বাংলাদেশে। এর ম্যানগ্রোভে বসবাস করে দুই শতাধিক বাঘ। তাদের বাসযোগ্য পরিবেশ ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে বলেই জানানো হয়েছে ওই গবেষণায়।
ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (IISER) জলবায়ু ও পরিবেশগত গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ি জানান, বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বসতি স্থাপনের জন্য গাছ কাটায় ম্যানগ্রোভ এবং মাছের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকায় আজ বিপন্ন সুন্দরবন। অনিশ্চিত জলবায়ু পরিবর্তন এবং মিষ্টি জলের কম সরবরাহের জেরে এর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
তবে অন্ধকারের মধ্যে কিছুটা আলোও রয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, একসময় মানুষের অবাধ কার্যকলাপের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেরও বদল ঘটাচ্ছে।
আলাস্কার বিশাল ক্যাল্প ফরেস্ট, মিশরের বুরুল্লাস হ্রদ বা পূর্ব এশিয়ার পীত সাগরের জলোচ্ছ্বাসের মতো সুন্দরবন বিপন্ন হলেও তা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে জানাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈজ্ঞানিক ও সংশ্লিষ্ট গবেষণামূলক প্রবন্ধের লেখক মাইকেল সিভারস। তাঁর কথায়, ‘ম্যানগ্রোভের বিস্তার আগে থেকে এখন অনেকটাই স্থিতশীল। বাঘের সংখ্যাও বাড়ছে। এর থেকে মনে হয় সুন্দরবন মূলত কিছু অংশকে বিপন্ন বলা যায়। ভারতীয় সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী এবং সতর্ক।’
কিন্তু ঘটনা হল, এই গবেষণার জন্য বিগত ৫ দশকের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন বৈজ্ঞানিকরা। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য রয়েছে গবেষণাপত্রে। যার মধ্যে ২০০৯–এর ঘূর্ণিঝড় আলিয়া এহং ২০১৯–এর নভেম্বরে হওয়া বু্লবুলের জেরে ক্ষয়ক্ষতির কথা রয়েছে। কিন্তু যেটা নেই সেটা হল এ বছরের মে মাসের ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আমফানের কথা। বন দফতরের এক আধিকারিকের মতে, ঘূর্ণিঝড় আমফান ম্যানগ্রোভ অরণ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস করে দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য বন্যপ্রাণ ওয়ার্ডেন বি কে যাদব বলেন, ‘আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের কিছুটা ক্ষতিপূরণ করতে বন দফতরের তরফ থেকে ৫ কোটি ম্যানগ্রোফ রোপণ করা হচ্ছে। এক বছরে ভারতীয় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৮৮ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬–এ। একইসঙ্গে মনরেগা (MGNREGA) প্রকল্পে সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলির বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানেরও চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত।’