হালিশহরে বিজেপি–র যুব নেতা সৈকত ভাওয়ালকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় রবিবার উত্তাল হয়ে উঠল বীজপুর এলাকা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করলেও এদিন বীজপুর থানার সামনে বিক্ষোভে শামিল হয় গেরুয়া শিবির। এদিন পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে থানার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা। তাদের দাবি, এ খুনের যে মাস্টারমাইন্ড তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।
শনিবার বিকেলে এলাকায় দলের গৃহসম্পর্ক অভিযানে বেরিয়ে খুন হন হালিশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি বুথ সভাপতি সৈকত ভাওয়াল (৪০)। এদিন রাতেই বীজপুর থানায় খুনের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বীজপুর থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, এফআইআরে চারজনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ররিবার সকালে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের নাম ল্যাংড়া বুবাই, সোমনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও অভিজিৎ দাস। ধৃত প্রত্যেকে হালিশহরের বাসিন্দা এবং এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে খুন, হত্যার চেষ্টা, হামলা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিনই তাদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হবে।
আর ধৃত এই তিনজনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতেই এদিন বীজপুর থানা ঘেরাওয়ের ডাক দেন স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। ব্যারিকেড ভেঙে একেবারে থানার সামনে পৌঁছে যান বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী–সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও শুরু হয়। সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে রয়েছেন মুকুল–পুত্র স্থানীয় বিজেপি নেতা শুভ্রাংশু রায়। তাঁকে এদিন থানার পাঁচিলে উঠে উত্তেজিত কর্মী, সমর্থকদের সামলানোর চেষ্টা করতে দেখা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার যখন দলের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে এলাকায় গৃহসম্পর্কে অভিযানে সৈকত ভাওয়াল বেরিয়েছিলেন তখন আচমকা বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী বাইকে করে এসে তাঁদের ওপর হামলা চালায়। বিজেপি কর্মীদের বেশ কয়েকজন পালিয়ে গেলেও সেখানে আটকে পড়েন সৈকত। তখনই বাঁশ, লাঠি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় সৈকতকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দুষ্কৃতীদের হাতে পেরেক লাগানো বাঁশ, হকি স্টিক, লোহার রডও ছিল। রক্তাক্ত অবস্থায় সৈকতকে উদ্ধার করে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিন রাতেই টুইট করে এ ঘটনার নেপথ্যে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রয়েছে বলে অভিযোগ তোলনে বিজেপি–র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। রাজ্যে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংও। যদিও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, ‘আদি বিজেপি–র সঙ্গে নব্য বিজেপি–র কোন্দলের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।’
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিকও। তাঁর কথায়, ‘এতে তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়। আমার কাছে খবর আছে, এটা আসলে পারিবারিক গণ্ডগোল। সেই থেকেই মারধর, মৃত্যু। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি।’ রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি, এটা অরাজনৈতিক কোনও গন্ডগোলের জেরে ঘটেছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’