নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের প্রাণের ঝুঁকি তৈরি করে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে গিয়েছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। সেই দায় ঘাড় থেকে নামাতে ২ জন প্রধানশিক্ষককে বদলি করল তারা। তাদের মধ্যে একজন এবছরই পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত কাজি মাসুম আখতার।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের চাল ও আলু তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়ুয়া পিছু ২ কিলোগ্রাম চাল ও ২ কিলোগ্রাম আলু বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।’ পরে অবশ্য সিদ্ধান্ত বদল করে স্কুল শিক্ষা দফতর। অভিভাবকদের স্কুলে গিয়ে ওই সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে বলে জানায় তারা। সেই মতো বিভিন্ন এলাকায় মাইকিংও করে পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি।
ঠিক হয় সোমবার দেওয়া হবে চাল ও আলু। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জনতা কার্ফু’ আবেদন জানানোর পর জারি হয় নির্দেশিকা। তাতে রবিবার ‘জনতা কার্ফু’-র মধ্যে চাল – আলু বিতরণের প্রস্তুতি নিতে হাজির থাকতে বলা হয় শিক্ষকদের। সোমবার বেলা ৩টের মধ্যে বিতরণ প্রক্রিয়া শেষ করতে বলা হয়।
সোমবার সকালে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল থেকে চাল-আলু বিতরণ শুরু হতে দেখা যায় অভিভাবকদের হাত ধরে স্কুলে হাজির হয়েছে বহু পড়ুয়া। অনেকে আবার স্কুল ইউনিফর্ম পরে। সংক্রমণ এড়াতে যাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে তারা স্কুলে কেন? প্রশ্ন তুলে খবর সম্প্রচার করে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। তাতে দেখানো হয় যাদবপুর বিদ্যাপীঠ ও কাটজুনগর বিদ্যাপীঠের ছবি। এর পরই ওই ২ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ করবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ মতো সোমবার রাতেই যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য ও কাটজুনগর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক কাজি মাসুম আখতারকে চিঠি পাঠান মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। মাসুম সাহেব এবছরই শিক্ষকতায় অনবদ্য অবদানের জন্য পদ্মশ্রীতে সম্মানিত হয়েছেন। স্কুলের ছাত্রদের জাতীয় সংগীত শেখানোয় ইসলামিক মৌলবাদীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
পরিমলবাবুকে বদলি করা হয়েছে রানিভবানী হাইস্কুলে। মাসুম সাহেব বদলি হয়েছেন বাগবাজার হরনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ২ শিক্ষকের এই অকারণ শাস্তিমূলক বদলিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষক সংগঠনগুলি।
তাদের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, অভিভাবকরা কাকে নিয়ে স্কুলে আসবেন তা কি প্রধানশিক্ষকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে? পরিস্থিতি যখন এতটাই গুরুতর তখন চাল-আলু বিলি করার সিদ্ধান্ত কেন নিল রাজ্য শিক্ষা দফতর? তাছাড়া সোমবার রাজ্যের প্রায় সমস্ত স্কুলেই একই ছবি দেখা গিয়েছে। তাহলে বেছে বেছে এই ২ জনের ওপরেই কেন শাস্তির খাড়া।