কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের দফতরে হাজিরা দিলেন বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও। হাজিরার নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবার তিনি সিবিআইয়ের নিজাম প্যালেসের দফতরে উপস্থিত হন। নির্ধারিত সময়ের কিছুটা পরে তিনি নিজাম প্যালেসে আসেন।
অবশ্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কী তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা জানাতে চাননি তদন্তকারীরা। এমনকী সিবিআইয়ের দফতর থেকে বেরিয়ে এ বিষয়ে মুখ খোলেননি কোটেশ্বর রাও। তবে সিবিআইয়ের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, কয়লা পাচারের সঙ্গে কোটেশ্বরের যোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা৷ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশির সময় একাধিক নথিতে তাঁর নাম পাওয়া গিয়েছে৷ কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে নেমে কোটেশ্বর রাওয়ের নাম উঠে আসে৷ সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল৷
দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সড়ক দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে কয়লা পাচার হত৷ সেই বিষয়ে বাঁকুড়া জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন, অথবা আদৌ কোনও পদক্ষেপ করেছিলেন কিনা, সেই সব তথ্য কোটেশ্বর রাওয়ের কাছ থেকে জানতে চেয়ে তাঁকে তলব করেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। পাশাপাশি অশোক মিশ্রর গতিবিধির উপর কোনও সন্দেহ হয়েছিল কি না, সে বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন গোয়েন্দারা৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আগেই জানিয়েছিল, কয়লাকাণ্ডের শিকড় অনেক গভীরে রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে জট খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ অনেক প্রভাবশালী নেতা-নেত্রীদেরও জেরা করা হচ্ছে৷ সেই নিয়ে একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ সেই তালিকার ভিত্তিতেই জেরা চলছে৷
গত দু’বছর ধরে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার থাকাকালীন কোটেশ্বর রাওয়ের কাছে কয়লাপাচার সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল। সেই সূত্রেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই।
কয়েকবার হাজিরা এড়ানোর পর কয়লাকাণ্ডে কলকাতায় সিবিআইয়ের দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন বাঁকুড়া থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ অশোক মিশ্র। প্রাথমিকভাবে কয়লা ও গরু পাচার নিয়ে অশোক মিশ্রের জবাবে সিবিআই গোয়েন্দারা সন্তুষ্ট হলেও পরে ৪ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ধৃত অশোক মিশ্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এবার সিবিআই নজরে পড়েন বাঁকুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও।
কয়লা ও গরু পাচারকাণ্ডের তদন্তে গতি বাড়িয়েছে সিবিআই। মামলার জাল গোটাতে তৎপর সিবিআই গোয়েন্দারা। ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা এই চক্রের চাঁইদের ধরতে নানা পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে মামলা দায়ের করে সিবিআই। তদন্তে নেমে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে সিবিআইয়ের হাতে। এরপরই প্রকাশ্যে আসে অনুপ মাজি ওরফে লালা—সহ একাধিক পুলিশ সুপার, জেলাশাসক, ইসিএল ও রেল আধিকারিকদের নাম। উঠে আসে বহু প্রভাবশালী নেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামও।