রাজ্য–রাজ্যপাল সংঘাত লেগেই আছে। এবার তা নিল নয়া মোড়। কারণ উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দ্বৈরথ সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছিল। তার জেরে রাজভবন থেকে নয়া ফরমান জারি করে মামলা চালানোর খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এই নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। এমনকী বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা চালানোর টাকা দেওয়া হয়েছিল। এবার রাজ্যের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে জবাব তলব করল শিক্ষা দফতর। কত টাকা দেওয়া হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছে বিকাশ ভবন।
এদিকে রাজ্যপালের একক সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজভবন–নবান্নের সংঘাত চলছিলই। এবার টাকার অঙ্ক জানতে চাইল বিকাশ ভবন। অর্থাৎ বিষয়টি এখন অনেক দূর যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আচার্যের হয়ে মামলা লড়তে কার নির্দেশে কত টাকা গিয়েছে? এবার পাঁচ দিনের মধ্যে সেই জবাব চাইল শিক্ষা দফতর। আগেই এই নিয়ে বোসের উপর ফোঁস করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এবার তথ্য তলব করে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চলেছেন তিনি বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সেই মামলার খরচ চালাতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজভবন নির্দেশিকা দেয়।
অন্যদিকে রাজ্য শিক্ষা দফতর এবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে। সেই পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে প্রশ্ন করা হয়েছে, আচার্যের মামলা লড়তে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে কি ফিন্যান্স কমিটির অনুমোদন ছিল? আচার্যের জন্য টাকা দেওয়া কি আদৌ আইনে আছে? কোন আইনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টে টাকা গেল? এমন নানা প্রশ্ন সেখানে তোলা হয়েছে। যার জবাব দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে। এমনকী সময় বেঁধে দিয়েছে বিকাশ ভবন। লিখিতভাবে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। দু’দিন আগেই ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি রাজ্য সরকারকে এভাবে অগ্রাহ্য করার স্পর্ধা পান কী করে? উনি তো মুখ্যমন্ত্রীকে অগ্রাহ্য করছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলছেন এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। আমি জানি না কীভাবে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত উনি নিচ্ছেন। আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।’
আরও পড়ুন: ‘সিপিএমের মতো ঐতিহাসিক ভুল করবে না তৃণমূল কংগ্রেস’, বড় ইঙ্গিত দিলেন কুণাল
আর কী জানা যাচ্ছে? গত ৪ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বৈঠক হয়েছিল রাজভবনে। সেই বৈঠক ছিল স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে। আর ওই বৈঠক শেষে রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ভাল আলোচনা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য–রাজ্যপাল সংঘাত যে এখনও জারি আছে সেটার ইঙ্গিত আবার মিলল। যে বৈঠক করতে রাজ্য সরকার নিষেধ করেছিল সেই বৈঠকেরই অনুমতি দিয়ে বসেছেন রাজ্যপাল। আর তা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এবার নিলেন পদক্ষেপ।