বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে চালু করতে হবে নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি। সোমবার দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের দ্বারস্থ হয়ে এমনই দাবি করল বিজেপি। ভোটের আগে প্রচার পর্বে হিংসার সম্ভাবনা ঠেকাতেই নির্বাচন কমিশনের কাছে এমন দাবি জানাল গেরুয়া শিবির। এদিকে, রাজ্যে ভোট প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বুধবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন উপ নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন।
সোমবার রাজ্য বিজেপি–র একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে বাংলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ জানানোর পাশাপাশি খসড়া ভোটার তালিকায় অমিলের কথাও উল্লেখ করেছে। বিজেপি–র এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন দুই সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত ও লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্ত। তাঁদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে ওই খসড়া তালিকা থেকে অধিকাংশ মৃত ভোটারের নাম এখনও মুছে ফেলা হয়নি।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনে দেওয়া বিজেপি–র চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে যত দ্রুত সম্ভব পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়ন করার দাবি জানানো হচ্ছে। নয়তো পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি–র ভোট প্রচার পর্বে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর তার জেরে ব্যাপক হিংসার পরিবেশ তৈরি হবে রাজ্যে।’
রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের আরও অভিযোগ, বিজেপি–র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়ে হামলা চলার সময় দর্শকের ভূমিক পালন করেছে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা প্রদর্শনের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।
চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যে রাজনৈতিক খুনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ পর্যন্ত ১৩২ জন বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গে খুনখারাপি বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজ্য পুলিশ এগুলি সর্বদা ব্যক্তিগত শত্রুতা এবং পারিবারিক কলহের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং পরে এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। আর এ সবের জেরে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা মুশকিল হয়ে পড়ছে।
যদিও বিজেপি এ সব অভিযোগ তুলে নাটক করছে বলে অভিযোগ করছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা স্বাভাবিক ব্যাপার। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অর্ধেক লোককে বিজেপি নেতাদের দেহরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরো সেনাবাহিনী তাঁদের সঙ্গে চলছে। তাঁরা কি নতুন কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইছেন? বাংলার মানুষ এর আগেও কেন্দ্রীয় বাহিনী দেখেছে। তারা তৃণমূলকেই ভোট দেবে।’
কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া পৃথক চিঠিতে বিজেপি নেতা সব্যসাচী দত্ত অভিযোগে জানিয়েছেন, ভারত–বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় যে সব বিধানসভা কেন্দ্রগুলি রয়েছে সেখানে খুব দ্রুত গতিতে নতুন ভোটারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিঠিতে সব্যসাচী লিখেছেন, ‘এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে ওইসব এলাকায় সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আর এভাবে চলতে থাকলে একদিকে যেমন দেশের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তেমনই সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও এর প্রভাব পড়বে।’
ভোটে যাতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী ফেডারেশনের কোনও সদস্যকে নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে সেই অনুরোধও জানিয়েছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের প্রতি সমর্থন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী ফেডারেশনের সদস্যদের।