করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহণ শিল্পে দুর্দশা দেখে মনমরা বাস চালক গঙ্গাধর প্রামাণিক। তিনি আর বাস চালাতে চান না। ফিরে যেতে চান পুরুলিয়ায় কেন্দা থানার জামবাঁধা গ্রামে। সেখানে ছাগল চড়িয়েই দিন কাটাবেন তিনি।
পেটের টানে রোজগার করতে অনেকদিন আগেই কলকাতায় চলে এসেছিলেন গঙ্গাধর। অনেকদিন ধরেই বাসই চালান। ছেলেকে সঙ্গে শ্রীরামপুর বাস টার্মিনাসের কাছে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তিনি। আগে সংসারের জন্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন গঙ্গাধর। কিন্তু এখন আর তেমন পারেন না। এখন তো এমন অবস্থা যে কোনও মাসে টাকা পাঠাতেই পারেন না। শ্রীরামপুরের যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেখানে মাসে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। সেই সঙ্গে লাগে বিদ্যুতের বিল, খাওয়ার খরচও। ফলে তিনি আর পেরে উঠতে পারছেন না। ছোটো ছেলেকে কন্ডাকটারির কাজে লাগিয়েছেন ঠিকই। কিন্ত তার থেকেও রোজগার কম। গঙ্গাধর জানান, ‘টিকিট বিক্রির কমিশন হল রোজগার। যেমন যাত্রী আসে, তেমনি আয়। আগে আয় হত হাজার টাকারও বেশি। এখন সেটা কমে এসে দাঁড়িয়েছে কোনওদিন ২৫০ টাকা। আবার কোনওদিন ৩০০ টাকা। ফলে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। তাই ঠিক করেছি, গ্রামের বাড়িতেই ফিরে যাব।’
প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর হাত ধরে সামান্য খালাসি থেকে বাসের স্টিয়ারিং ধরতে পেরেছিলেন গঙ্গাধর। এরপর কলকাতার বুকে একাধিক রুটে বাস চালিয়েছেন। কখনও শ্রীরামপুর থেকে বাগবাজার রুটের বাস চালাতেন, আবার কখনও শ্রীরামপুর থেকে সেক্টর ফাইভ রুটের বাস চালিয়ে এসেছেন। আবার কখনও স্কুল বাসও চালাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর দফায় দফায় লকডাউনে রোজগার কমতে শুরু করেছে গঙ্গাধরের। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, গঙ্গাধরের মতো আরও অনেক চালকের হয়ত একই অবস্থাই দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকার এখনও বাস ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও সবুজ সংকেত দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে কতদিন এই পুরনো পেশা ধরে রাখতে পারবেন, তা চিন্তা করে ঘুম কেড়েছে পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই।