পশ্চিমবঙ্গে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আজ, মঙ্গলবার একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের ফুলবেঞ্চ। একই সঙ্গে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশকে। নির্বাচনের সময় যদি কোথাও গোলমাল হয় সেটার দায় বর্তাবে রাজ্য পুলিশের ডিজির উপরই। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে রবিবারই বাংলায় এসেছে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বাধীন ফুলবেঞ্চ। আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। মঙ্গলবার নানা এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। নির্বাচনের আগে হিংসা নিয়ে ডিএম, এসপিদের কড়া নির্দেশ দিল কমিশন। যার সারমর্ম—অবাধ, শান্তিপূর্ণ, হিংসামুক্ত নির্বাচন করতে হবে বাংলায়।
এদিকে নির্বিঘ্নে লোকসভা নির্বাচনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকা ও ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে বৈঠকের পর কড়া নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। তারপর সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, ‘হিংসামুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এখানে ভয়মুক্ত হয়ে যাতে প্রত্যেক নাগরিকই উৎসবের মেজাজে ভোট দিতে পারে। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই আমাদের জানিয়েছে, তাঁরা অবাধ শান্তিপূর্ণ ও হিংসামুক্ত নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। আমলাতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে এখানে পক্ষপাতিত্ব করা হয়। এটা আমাদের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই বলেছে। কিছু রাজনৈতিক দল দাবি জানিয়েছে, যাতে নির্বাচন এক দফায় করা যায়। আধার কার্ড যদি বাতিল হয়ে যায়, তাতে ভোটে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, ভোটিং মেশিনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।’
অন্যদিকে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, নির্বাচনে হিংসা নিয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেওয়া হবে। কোনও হিংসা বরদাস্ত করা হবে না। রাজ্যে অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ ভোটের দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য পুলিশকেই। কোনও গোলমাল হলে দায়ী থাকবেন ডিজিপি। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কথায়, ‘এই বিষয়ে মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজিকেও জানিয়েছি। প্রশাসনের কর্তারাও কথা দিয়েছেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভোট করতে বদ্ধপরিকর। নির্বাচন কত দফায় হবে, সেটা নির্ধারিত নয় এখনই। কারণ বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন আছে। আমাদের পর্যবেক্ষকরা জেলায় জেলায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে। তবে যেদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সংবাদমাধ্যমকেই প্রথম জানানো হবে।’
আরও পড়ুন: ‘আমি মনে করি ওটা অপবিত্র’, রামেন্দুর রামমন্দির নিয়ে মন্তব্যে এফআইআর শুভেন্দুর
আর গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। হিংসার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি, ভোটারদের এবং প্রার্থীকে হুমকি যাতে দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্পর্শকাতর এলাকায় পাঠাতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সাপ্তাহিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়ার পরিকল্পনা জানাতে হবে। এছাড়া পর্যবেক্ষকদের বুথ পরিদর্শন করতে হবে, পোলিং এজেন্টদের জিজ্ঞাসা করতে হবে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা, আর সবটা প্রকাশ্যে করতে হবে। ভোটার স্লিপ সময়ে দিতে হবে, কোনও সমস্যা যেন না হয়। তার জন্য প্রতিনিয়ত চেকিং বাড়াতে হবে। ছাপ্পা ভোটারদের উপর নজর রাখতে হবে। ধরা পড়লে আইনত পদক্ষেপ করতে হবে। অভিযোগ পেলেই সাড়া দিতে হবে। ত্রিস্তরীয় বলয় থাকবে ইভিএম নিরাপত্তায় স্ট্রং রুমে। ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি চলবে। কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে কাজে লাগানো যাবে না। স্বচ্ছতার সঙ্গে জনসভা করার অনুমতি দিতে হবে মাঠ,নানা জায়গায়। তবে প্রথম আসার ভিত্তিতে। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ধরতে হবে। ভু্য়ো খবরে নজর রাখতে হবে। জেলাস্তরে সোশ্যাল মিডিয়া সেল রাখতে হবে ভুয়ো খবরের জবাব দিতে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কী ভাবে ব্যবহার করা হবে সেটা ঠিক করবে রাজ্য প্রশাসন এবং রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। জেলাশাসক, পুলিশ সুপাররা যেন তাঁদের অধঃস্তনদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন।