নিজের মত প্রকাশ্যে বলে ফেলেছিলেন তিনি। যদিও সেই মত দলের বিরুদ্ধেই যায়। যা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বেমানান। সিপিআইএম সদস্য হয়ে এমন কাজ করা যায় না। তাই দলের শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে বিদ্রোহী নেতা তথা উত্তর দমদম কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে দাওয়াই দিল লালপার্টি। যার জেরে মুখ বন্ধ হয়ে গেল। আগামী তিন মাস দলের পক্ষ থেকে কোনও বক্তব্য রাখতে পারবেন না তিনি। এমন ফতোয়াই জারি হয়েছে।
কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? শনিবার নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করতে ভার্চুয়াল রাজ্য কমিটির বসে সিপিআইএমের। সেখানেই বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঠিক হয়, এই অভিযোগে তন্ময়কে শাস্তি পেতে হবে। প্রবল চাপের মুখে সিপিআইএমের শীর্ষনেতারা সবাইকে বার্তা দিতে এই সিদ্ধান্ত নিলেন। নির্বাচনে দলের ভরাডুবি নিয়ে প্রকাশ্যেই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু দলের নীতি ‘গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা’ তা সমর্থন করে না। তাই তিন মাস মুখে কুলুপ আঁটার ব্যবস্থা করে দিল দল। আর ৯০ দিন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যাবে না এই তাত্ত্বিক নেতাকে।
ঠিক কী বলেছিলেন তন্ময়? তাঁর মত ছিল, ‘দলের এই ব্যর্থতার দায় সিপিআইএম শীর্ষ নেতৃত্বের। নিচুতলার কর্মীদের নয়। এটা তো স্ট্যালিনের যুগ নয়। শুধু স্ট্যালিন নিয়ে বাগড়ম্বর করলে হবে না। লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের দায় কেউ নেননি। বিধানসভায় হারের পরেও কেউ দায় নেবেন না। সেটা হতে পারে না।’ প্রকাশ্য তন্ময় ভট্টাচার্য যেন ‘হুইসল ব্লোয়ার’ হয়ে ওঠেন। যা মেনে নিতে পারেননি আলিমুদ্দিনের শীর্ষ নেতারা। তাই এবার শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সিপিআইএম রাজ্য কমিটি। সর্বসম্মতিক্রমে তন্ময়ের উপর কোপ দিয়ে তিন মাসের জন্য মুখ বন্ধ করা হল।
এখন দলের চরম খারাপ সময় যাচ্ছে। রাজপাট থেকে চলে যাওয়ার পর ক্রমাগত শূন্যের দিকে এগোচ্ছেন তাঁরা। তবুও সদর্থক সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না প্রথমসারির নেতারা। এই অবস্থায় তন্ময়কে সেন্সর করা অনেককেই অবাক করেছে। তবে শাস্তি একা পেয়েছেন শুধু তন্ময় ভট্টাচার্যই। তিনি ছাড়া যারা দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন তাঁদের কারওই শাস্তি হয়নি। শীর্ষনেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও দলের নীতি নিয়ে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়নি।