স্পেনে বাংলার জন্য লগ্নি টানতে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দুর্গাপুজোর থিম শোনেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিট সময় নিয়ে সেখান বসেই গান লিখে, সুর দিয়ে, নিজেই গেয়ে পাঠিয়ে দেন। আর মহালয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্বোধন করেন। ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুরুচি সংঘের থিম সংয়ের নেপথ্য ঘটনা সামনে নিয়ে এলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। গীতিকার ও সুরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এমন কাজ করেছেন বলে জানান তিনি।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব কর্মসূচিতে ‘মা’ শব্দটি জুড়ে থাকে। আর অন্যান্য বছরের মতো এবারও সুরুচির থিম সং ‘মা’। তোর একই অঙ্গে এত রূপ’ গানের কথা ও সুর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এবার সব দুর্গাপুজোরই উদ্বোধন করেছেন ভার্চুয়ালি। তিনি আসেননি সুরুচি সংঘে পায়ে চোট থাকার কারণে। কিন্তু মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে বলেন, ‘আপনার সশরীর উপস্থিতি ছাড়া সুরুচির পুজো হয় না’। তখন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভাবিস না, ঠিক দেখা হবে কার্নিভালে।’
কেমন হয়েছে সুরুচি সংঘ? বাংলার লোকশিল্প–হস্তশিল্প–কুটিরশিল্প—এই তিনটির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে সুরুচি সংঘের মণ্ডপ। আর এটাই দেখতে চান মুখ্যমন্ত্রী। তখন মন্ত্রী অরূপ বলেন, ‘দিদি, এই বছর বাংলার নানা জেলার লোকশিল্প, হস্তশিল্পের মধ্যে যে বর্ণময় বৈচিত্র্য আছে তা এখানে রাখা হয়েছে। তিনমাস ধরে কাজ করেছেন গ্রামবাংলার গুণী শিল্পীরা।’ সুরুচি সংঘের মণ্ডপটি মায়ের অবয়ব। বাঁশ–বেত, গুলঞ্চ লতা, কাপড়–সুতো দিয়ে তৈরি গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঢ্যাপা পুতুল প্রতিমা। তার সঙ্গে বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ার বিশালাকার বর্ণময় টেরাকোটা ঘোড়া, বর্ধমানের কাঠের পুতুল, বীরভূমের চদর বদর শিল্প থাকছে। মণ্ডপ সেজে উঠেছে পুরুলিয়ার আউশ ধানের শীষ, সবং গ্রামের খাগড়াকাঠি, উত্তর ২৪ পরগনার মাছ ধরার পলো দিয়ে। দেওয়ালে ভিতরে শোলা ও লতার নানা কাজ। তাম্রবর্ণের সনাতনী মাতৃপ্রতিমা। কাপড় কেটে তৈরি নানা রঙের পটচিত্র, পুরুলিয়ার জুন ঘাসে বোনা ঝাড়বাতি এবং ঝাড়গ্রামের পাঁচি গামছার শিল্প আকর্ষণ করবে।
আরও পড়ুন: ‘শুধু রিভিশন করলেই আমার হয়ে যাবে’, ফেসবুক পোস্টে চমক দিয়ে অকপট দিলীপ
আর কী জানা যাচ্ছে? তবে এবারের মণ্ডপে মনীষীদের ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ রায়, মহানায়ক উত্তম কুমার–সহ অনেক কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের উদ্দেশে বলেন, ‘শহরে দুর্গাপুজো দেখতে আসা বিদেশি পর্যটক এবং ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা এলে এই তালপাতার পাখায় হাওয়া দিতে হবে। মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়াবে। বাইরের পুতুলগুলি এবং প্রতিমা সংরক্ষণ করবে। পুজো হয়ে গেলে আমায় দুটো পাখা দিয়ে যাবে।’ সম্মতি জানান মন্ত্রী অরূপ।