বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। তবে তার নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতে এখনও বিস্তর দেরি আছে। কিন্তু নির্বাচনের কাজের প্রস্তুতির কথা বলে এখনই রাজ্য প্রশাসনে হস্তক্ষেপ শুরু করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি রাজ্যগুলিকে তারা চিঠি দিয়েছে বলে খবর। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জেলা নির্বাচন অফিসার (ডিইও) ও নির্বাচন নিবন্ধন অফিসারকে (ইআরও) নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বদলি করা যাবে না। এমনকী বদলি করতে গেলে তার কারণ বিস্তারিত রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের মাধ্যমে কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে। সেটা বিচার করার পর অনুমোদন মিলতে পারে। আবার নাও মিলতে পারে। কলকাতা এই দুটি পদ নেই। তবে প্রত্যেক জেলায় এই দু’টি পদে থাকেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক। সুতরাং জেলাশাসকদের বদলির বিষয়টি নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে বলে অনেকে মনে করছেন।
চিঠিতে আর কী বলা হয়েছে? নির্বাচন কমিশন চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছে, এখন সংশোধিত ভোটার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সেখানে নিযুক্ত কর্মীদেরও বদলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক। পদ খালি থাকলে সেটাও তিনিই দেখবেন। প্রয়োজন হলে তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শও করবেন। এই পদক্ষেপের অর্থ হল— জেলাশাসকের নীচে যেসব আধিকারিক ও কর্মী ভোটার তালিকা তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত এবার তাঁরা সরাসরি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেন। এটা কৌশলে করে নেওয়া হল।
হঠাৎ এই চিঠি কেন? ভোটার তালিকার কাজ সবে শুরু হয়েছে। সেখানে এমন চিঠি বা পদক্ষেপ আগে কখনও দেখা যায়নি। সব পর্যায়ে বদলি নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের মাঝে রাজ্য প্রশাসনে এমন বদলির ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। আগামী ১ নভেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হতে চলেছে। ৫ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার প্রকাশ হওয়ার কথা। আর সেদিন পর্যন্ত এই নিয়ন্ত্রণ বহাল থাকবে। হঠাৎ নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশিকা জারিতে প্রশ্ন উঠছে। এই চিঠি আসলে সবটা নিজের হাতে রাখার কৌশল বলে মনে করছেন আমলারা।
আরও পড়ুন: ‘পশ্চিমবঙ্গকে ২ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে’, বিস্ফোরক দাবি করলেন গিরিরাজ
আর কী জানা যাচ্ছে? নির্বাচন কমিশনের সাফাই, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ সঠিকভাবে করার জন্যই এই নির্দেশ। সঠিকভাবেই তো হয়। সেটা আবার আলাদা করে হস্তক্ষেপে বলার কী আছে? এমন প্রশ্নও তুলছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এই চিঠিতে রাজ্যগুলিকে ভোটার তালিকার কাজে শূন্যপদ পূরণ–সহ জরুরি পরিকাঠামো তৈরি করতে বলা হয়েছে। অতীতে শাস্তি পেয়েছেন এমন কোনও অফিসারকে ভোটার তালিকার কাজে যুক্ত করা যাবে না বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব রাজ্য সরকারকে এই নির্দেশিকা পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।