রাত কেটে গিয়ে সকাল হয়েছে। রাজভবনের বাইরে ধরনা মঞ্চে অবিচল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আছেন সেখানে অন্যান্য তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ এবং নেতা–মন্ত্রীরা। গান থেকে নানা কথাবার্তা রাতে সেখানে হয়েছে। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজভবনের গেটে গিয়ে তাঁদের লিখিত স্মারকলিপি দিয়ে এসেছেন। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বৃহস্পতিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এটা যেন জমিদারি। নয়াদিল্লি পৌঁছেই তার জবাব দিলেন রাজ্যপাল।
এদিকে রাজ্যপাল রাজভবনে নেই। তিনি নয়াদিল্লিতে। আজ, শুক্রবার তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন বলে সূত্রের খবর। সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনড় অবস্থান নিয়েছেন। অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা না করে যাবেন না। রাতে তাই ধরনায় বসেছিলেন রাজভবনের গেটে। আজ, শুক্রবার সকাল থেকে আবার আন্দোলন শুরু হবে। সেখানে এখন প্রশ্ন উঠছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কবে আসবেন? এই বিষয়ে রাজ্যপাল নিজে কোনও দিনক্ষণ বা তারিখ জানাননি। তবে ঘেরাও ছেড়ে ঘরে আসতে আহ্বান করেছেন। আবার ভাঙব কিন্তু মচকাবো না নীতি নিয়ে ঠুকেছেনও।
ঠিক কী বলেছেন রাজ্যপাল? অন্যদিকে চুপ করে থাকেননি সিভি আনন্দ বোস। রাতে রাজ্যপালের বিবৃতি, ‘গ্রাম বাংলায় যাওয়া মানে হচ্ছে মানুষের কাছাকাছি যাওয়া। যাকে বাংলায় বলে তৃণমূল। তাহলে কি তৃণমূল অন্যদের তৃণমূল থেকে দূরে রাখতে চায়? জমির কাছে যাওয়া জমিদারি নয়। বরং জমির কাছে না গিয়ে শহরের আরামে থেকে কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ করা হল নতুন ঘরানার জমিদারি। রাজ্যপালের কাছে মাটি হল পবিত্র। ততটাই পবিত্র মানুষ, যাঁরা সেই মাটিতে বসবাস করেন।’ এভাবেই ঠুকেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কারণ রাজভবন থেকে রাজ্যপাল জমিদারি চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটারই জবাব দিলেন সাংবিধানিক প্রধান।
আরও পড়ুন: ‘দেখা না করা পর্যন্ত এখানেই থাকব’, রাজভবনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
আর কী বলেছেন রাজ্যপাল? একদিকে কড়া মেজাজ দেখালেন। অন্যদিকে রাজ্যপাল অভিভাবকসুলভ বার্তাও দিলেন। নয়াদিল্লিতে থাকলেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধরনা নিয়ে বলেন, ‘ঘেরাও নয়, ঘর আও’। সুতরাং এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট রাজ্যপাল এবার সুর নরম করলেন। দেখা করতে চান। তবে রাজভবনে রাজ্যপাল কবে আসবেন? সেটা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে মুখোমুখি দেখা হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হল বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও পাল্টা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ঘরে যাব কী করে, ঘরের মালিকই ভয়ে পালিয়েছে! উনি এখানে আসুন না, সকালবেলায়ই চলে আসুন। যাবে আমাদের প্রতিনিধিদল। রাজভবনে তো উনি নেই। দিল্লি পালিয়েছেন। পালিয়েছেন বলে ধরনার বসতে হল। ধরনায় বসার তো পরিকল্পনা ছিল না। পালালেন কেন? সবাই যদি পালায় তাহলে হবে কোথা থেকে?’