গত আট বছর ফুটপাথেই তাঁর সংসার। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ফুটপাথই ভরসা। হাওড়ার কদমতলা এলাকায় ভিক্ষে করতে দেখা যায় তাকে। গায়ে ময়লা জামা, মাথায় উষ্কখুষ্ক চুল। ভিক্ষে করে ১ বেলা খাওয়া জোটে। তাই চেহারাটা শীর্নকায়। অন্যান্য দিনের মতোই মহানবমীর সন্ধ্যাতেও শুয়ে ছিলেন রাজপথে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নজরে পড়তেই রাতারাতি পাল্টে গেল তার জীবন। রাস্তা থেকে সরাসরি রাজভবনে প্রবেশ। এমনটাও হয়, দেখল সকলে। এই ভিক্ষুকের দেখা পেলেন রাজ্যপাল যেহেতু সে রাজভবনের বাইরে শুয়ে রাত কাটাত।
এদিকে পারিবারিক কোনও সমস্যার জেরেই পথকেই একান্ত আপন করে নিয়েছিল এই ভিক্ষুক। এটা নজর এড়ায়নি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের। তাই মহানবমীর রাতে রাজভবনের বাইরে এসে ওই ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা বললেন। তখনই জানতে পারেন ওই ভিক্ষুকের নাম অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তারপরের ঘটনাটা শুধুই যেন সিনেমার প্লট। রাতারাতি রাস্তা থেকে রাজভবন—এটাই ঘটে গেল তার জীবনে। পাল্টে গেল কষ্টের কপাল সুখে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাজভবনের কোয়াটার্সে পাকাপাকি ঠাঁই হল মাঝবয়সী ভিক্ষুকের। এখন থেকে তার ‘রোটি–কাপড়া–মকানের’র ব্যবস্থা করেছে রাজভবন। এই কথা নবমীর সন্ধ্যায় এক্স হ্যান্ডেলে নিজেই জানিয়েছেন রাজ্যপাল। দুর্গাপুজোয় বেশ কয়েকদিন নানা মণ্ডপে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আর নবমীতেও রাজভবন থেকে বেরনোর সময় ওই ভিক্ষুককে দেখতে পান রাজ্যপাল। তাঁর কাছে গিয়ে দোভাষীর মাধ্যমে নাম, ঠিকানা সব জানতে চান। তারপরই তাঁর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: কলকাতার আকাশে উড়বে ৬০০টি ড্রোন, বিজয়া দশমীতে দেখা যাবে রাবণ দহন
ঠিক কী টুইট করেছেন রাজ্যপাল? এদিন টুইটে গোটা বিষয়টি তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি লিখেছেন, ‘এদিন ফুটপাথের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নজরে পড়ে অভিষেক চট্টোপাধ্যায় নামের এক ভবঘুরেকে। গত ৮ বছর ধরে যিনি ফুটপাথেই জীবন কাটিয়েছেন। এখন থেকে তাঁর রোটি–কাপড়া–মকানের বন্দোবস্ত করবে রাজভবন। রাজভবনেই চাকরি করবেন ওই ব্যক্তি। রাজভবনের কোয়ার্টারে তাঁকে থাকার জায়গা দেওয়া হয়েছে।’ আর রাজভবন সূত্রে খবর, পারিবারিক অশান্তির জেরে বিগত ৮ বছর ধরে ফুটপাথই ওই ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা। কখনও রাজভবনের ফুটপাথ, কখনও ধর্মতলার ফুটপাথে রাত কাটে। একসময় হাওড়ার একটি কারখানায় সাফাই কর্মীর কাজ করতেন। এখন রাজভবনে তাঁর থাকা, খাওয়া এবং চাকরির বন্দোবস্ত করার জন্য অফিসারদের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। এখন রাজভবনের কোয়াটার্সে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে তাঁকে রাজভবনের সাফাইয়ের কাজে লাগানো হবে।