রবিবার দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলেন ছেলেকে। তারপর বুধবার সন্ধ্যায় ছেলে ফোন করেছিল বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু এবং মা স্বপ্না কুণ্ডুকে। স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডু তাঁদের ফোনে বলেছিল, ‘আমি খুব চাপে আছি বাবা। তোমরা এসে আমাকে বাঁচাও।’ রাত ৯টা নাগাদ শেষবার বাবা–মাকে ফোন করে এই কথাই বলেছিল বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। আর তারপরই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে পড়ুয়ার পরিবারে ফোনে খবর দেওয়া হয়, ছেলে অসুস্থ। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডুর মামা অরূপ কুণ্ডু আজ, বৃহস্পতিবার এই কথাই জানালেন সংবাদমাধ্যমকে। এমনকী ভাগ্নের রহস্যমৃত্যুর নেপথ্যে ‘র্যাগিং’ আছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। যাদবপুর থানায় এফআইআর দায়েরও করেন।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে তৈরি করা হয়েছে নিজস্ব কমিটি। আত্মীয়দের নিয়ে নদিয়া থেকে কলকাতায় চলে এসেছেন বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু আর মা স্বপ্না কুণ্ডু। এখানে এসে জানতে পারেন মারা গিয়েছে তাঁদের ছেলে স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডু। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের জানায়, আত্মহত্যা করেছে পড়ুয়া। আর এটা কিছুতেই তা মানতে পারছেন না স্বপ্নদ্বীপের বাবা–মা। তাঁদের অভিযোগ, র্যাগিং করেই মেরে ফেলা হয়েছে তাঁদের ১৮ বছরের ছেলেকে। রামপ্রসাদ কুণ্ডু কো–অপারেটিভ ব্যাঙ্কের গাজনা শাখার কর্মী। মা স্বপ্না কুণ্ডু আইসিডিএস কর্মী। দুই ছেলের মধ্যে স্বপ্নদ্বীপ বড় ছেলে। ছোট ছেলে এখন স্কুলে পড়ে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল স্বপ্নদ্বীপ বলে জানাচ্ছেন পড়শিরা। বাংলায় অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু পড়াশোনা শুরুর আগেই ঘটে গেল মর্মান্তিক পরিণতি।
অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলের ‘এ’ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় স্বপ্নদীপের। আত্মহত্যা নাকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে খুন করা হয়েছে? তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। তবে আত্মহত্যার কথা মেনে নিতে নারাজ তাঁর মামা। তাঁর কথায়, ‘কাল রাতেও মায়ের সঙ্গে কথা বলেছে স্বপ্নদ্বীপ। ও মাকে বলেছিল, আমি ভাল নেই। আমার খুব ভয় করছে। তুমি শীঘ্রই এসো, তোমার সঙ্গে অনেক কথা রয়েছে’। কিন্তু সেই কথা অজানাই থেকে গেল। ছেলের ফোনে মা পরে বহুবার ফোন করেন। কিন্তু রিং হয়ে যাচ্ছিল। ফোন ধরেনি স্বপ্নদ্বীপ।
আরও পড়ুন: ত্রিশঙ্কু ফলাফলেও বোর্ড গঠন করল তৃণমূল, বাঁকুড়ার বিজেপির জয়ী প্রার্থীরা যোগ দিল
তাহলে কি খুন করা হয়েছে? স্বপ্নদ্বীপের গায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে সূত্রের খবর। হস্টেলের পড়ুয়াদের দাবি, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁরা ভারী কিছু পড়ার শব্দ পান। সেটা শুনে সেখানে ছুটে গিয়ে দেখেন, নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন স্বপ্নদীপ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হয় মেধাবী পড়ুয়ার। আজ এই ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ অফিসাররা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য বলেন, ‘এমন ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যদি র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমরা কড়া পদক্ষেপ করব।’