কুণাল ঘোষের সঙ্গে এখন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বৈরথ চরমে উঠেছে। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছেন বরাহনগরের বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায়। একের পর এক এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। আর তাঁকে যোগ্য সমর্থন করেছেন তাপস রায়। একেবারে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করছেন এই বিধায়ক। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন অশান্ত পরিবেশ দলের মধ্যে তৈরি হওয়া নিয়ে মুখ খুলতে চাইলেন না রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বরং তিনি এই নিয়ে মন্তব্য করলে বিস্ফোরণ ঘটবে বলে জানান।
আজ, শনিবার দুপুরে কলকাতা পুরসভার টক টু মেয়র অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ওই অনুষ্ঠান শেষ হতেই কুণাল–সুদীপ–তাপসদের করা মন্তব্য নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। সংবাদমাধ্যমের এই প্রশ্নের জবাবে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সটান জবাব, ‘এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না। আমি বললে আবার বিস্ফোরণ হবে। কুণাল কী বলেছেন, আমি কিছুই শুনিনি। যদি কিছু শুনি, তখনই বলতে পারব।’ এভাবেই দলের অভ্যন্তরের বিতর্ক থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখলেন পোড়খাওয়া এই রাজনীতিবিদ। শুক্রবার থেকে একের পর এক মন্তব্য করছেন কুণাল। আজ, শনিবার এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে তিনি উত্তর কলকাতার সাংসদের সঙ্গে কয়লা দুর্নীতির যোগ থাকার সম্ভাবনা জানিয়েছেন। ইডি–সিবিআইকে ট্যাগ করে তদন্ত করার দাবি তুলেছেন কুণাল।
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম দিবসকেই বেছে নিলেন অভিষেক, উত্তর থেকে দক্ষিণে পাঁচটি মেগা জনসভা
এদিকে আজ আবার উত্তর কলকাতা থেকে শশী পাঁজাকে প্রার্থী করার কথা বলেছেন কুণাল ঘোষ। তাতে আরও জলঘোলা হতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে কুণাল এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘নেতা অযোগ্য গ্রুপবাজ স্বার্থপর। সারা বছর ছ্যাঁচড়ামি করবে আর ভোটের মুখে দিদি, অভিষেক, তৃণমূল দলের প্রতি কর্মীদের আবেগের উপর ভর করে জিতে যাবে, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করবে, সেটা বারবার হতে পারে না।’ তখন তিনি নাম নেননি। তারপর তাপস রায় হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতেই নাম নিয়ে আক্রমণ শানান কুণাল। নিজের বায়ো বদল করেন এক্স হ্যান্ডেল থেকে। দলীয় দুটি পদ ছেড়ে দেন। এমনকী নিরাপত্তাও ছেড়ে দেন।
অন্যদিকে মোদীর আরামবাগের সভার উল্লেখ করে কুণাল লেখেন, ‘মোদী বাংলার মাটিতে একরাশ কুৎসা করে গেলেন। যুক্তিতে তাঁকে ধুয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু ঘটনা হল, তাঁর কড়া সমালোচনার মূল দায়িত্ব যাঁদের, দু’টি আলাদা বিরোধী দলের লোকসভার দলনেতারা তো প্রধানমন্ত্রীরই লোক। এই দু’জনকে দু’ভাবে ব্যবহার করেন মোদী। একজনকে রোজভ্যালি থেকে বাঁচিয়ে গলায় বকলস পরিয়ে রেখেছেন।’ লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা সুদীপের সঙ্গে বিজেপির যোগ বোঝাতেই রোজভ্যালি প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। কুণালের কথায়, ‘উত্তর কলকাতায় যা হচ্ছে সেটা দলের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ঘর দখল করে অফিস চালাচ্ছেন। ওঁকে নাকি কোন মিশনারিজ অনুমতি দিয়েছে। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং তাঁর হয়ে ভুবনেশ্বর অ্যাপোলো হাসপাতালের বিল মেটানোর নথি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বিল কে মিটিয়েছিলেন। তদন্ত করে দেখতে হবে। তদন্তের স্বার্থে সুদীপকে গ্রেফতার করা উচিত। যদি কেন্দ্রীয় সংস্থা এটি এড়িয়ে যায়, আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।’