নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই ওঠে। সে ক্ষেত্রে বহু মামলায় পুলিশকে ভর্ৎসনা করে থাকে আদালত। তা সত্ত্বেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সেরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে কলকাতার সার্ভে পার্ক থানা এলাকায়। ওই এলাকার এক বৃদ্ধকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই সংক্রান্ত মামলায় তদন্তকারী অফিসারকে রীতিমতো ভরা এজলাসে ভর্ৎসনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘যেমন খুশি ধারা যোগ করা হচ্ছে। এ কোনও তদন্তই নয়, জনগণের টাকা নষ্ট করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: রাজ্য সরকারের গাফিলতিতেই ফাঁসির সাজা রদ, বললেন কামদুনির গণধর্ষণে নির্যাতিতার ভাই
কী অভিযোগ?
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই বৃদ্ধ নাগরিকের বিরুদ্ধে এক মহিলাকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। মূলত একটি ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত হয়েছিল। সেই ঘটনায় বৃদ্ধের বিরুদ্ধে একাধিক ধারা দিয়েছিল পুলিশ। সেই সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। মামলাটি হাইকোর্টে উঠলে কেস ডায়েরি তলব করেন বিচারপতি। একইসঙ্গে তদন্তকারী অফিসারকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর আদালতের নির্দেশে হাজির হয়ে কেস ডায়েরি পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার। কেস ডায়েরি দেখার পরেই রীতিমত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিচারপতি। কেস ডায়েরিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এরপরেই বিচারপতি তদন্তকারী অফিসারকে ভরা এজলাসে প্রকাশ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারাটি পড়তে বলেন। তারপর এই মামলায় তদন্তকারী অফিসারকে গোপন জবানবন্দিও পড়তে বলেন বিচারপতি। এরপর অভিযোগ পত্র তিনি তদন্তকারী অফিসারকে পড়তে বলেন। কিন্তু সেখানে কোথাও মহিলার শ্লীলতাহানির বিষয়টি উল্লেখ করা নেই। তাতেই বেজায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বিচারপতি।
তা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারকে প্রশ্ন করলে কার্যত তিনি চুপ থাকেন। বিচারপতির মতে, কেস ডায়েরিতে যা ইচ্ছে তাই লেখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই তদন্তকারী অফিসারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি। তদন্তকারী অফিসারের উদ্দেশ্যে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘আপনার মাথায় কী আছে? এতগুলি ধারা কী কারণে দেওয়া হয়েছে?’ কার নির্দেশে এই ধারা দেওয়া হয়েছে? সে কোথাও জানতে চান বিচারপতি। এই সংক্রান্ত মামলায় ওই অফিসারের বিরুদ্ধে আদৌও কোনও পদক্ষেপ করা হবে কিনা সে বিষয়ে পরবর্তী শুনানিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আদালতের তরফে জানানো হয়েছে।