কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরই টেট আন্দোলনকারীদের তুলে দিতে সক্রিয় হল পুলিশ। আর তাতেই গোটা রাজ্য দেখল ‘মিডনাইট অপারেশন’। চারদিনের আন্দোলন মুহূর্তে ফাঁকা করে দিল পুলিশ। সেটা অবশ্য করতে বলেছিল আদালত। বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘পুলিশ কি পাওয়ারলেস’। ১৪৪ ধারা মানতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর আদালতের রায় মেনে কাজ করেও এখন বিরোধীদের তোপের মুখে পুলিশ ও রাজ্য সরকার। এই ঘটনায় সিপিআইএম–বিজেপি আজ, শুক্রবার গোটা রাজ্য স্তব্ধ করে প্রতিবাদ করার ডাক দিয়েছে।
ঠিক কী বলেছেন সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়? এই মিডনাইট অপারেশন–এর পর আজ, শুক্রবার রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘এরকম ভালবাসার দরকার নেই। তাঁর থেকে ঘৃণা করা ভাল। যন্ত্রণা, প্রতারণা এবং হতাশার মধ্যে রয়েছে চাকরিপ্রার্থী। গোটা রাজ্যের যুব সমাজই রয়েছে এই যন্ত্রণার মধ্যে। শুধু যারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষা দিয়েছেন তাঁরাই নন, ভুয়ো জব কার্ডে যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও একই হতাশায় রয়েছেন। যেখানে কারাখানাগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাঁরাও একই হতাশায় রয়েছেন। কাজ না পেয়ে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। রাত জেগে আজ চাকরিপ্রার্থীদের আমরণ অনশন করতে বাধ্য করেছে পর্ষদ। যতদিন না যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ডিওয়াইএফআই চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে থাকবে। যদিও আগেই ১৪৪ ছিল তাহলে বসতে কেন দিল?’
আর কী জানা যাচ্ছে? মিডনাইট অপারেশনে করুণাময়ীতে ২০১৪ এবং ২০১৭ সালের টেট আন্দোলনকারীদের চ্যাংদোলা করে তুলে দেয় পুলিশ। আদালতের নির্দেশের পর পুলিশের অভিযানের ইঙ্গিত পেয়ে আগে থেকেই সেখানে জড়ো হয়েছিলেন বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের নেতারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। বিজেপির পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে যান অগ্নিমিত্রা পাল। এছাড়াও ঘটনাস্থলে যায় কংগ্রেসের যুবনেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়–সহ প্রতিনিধি দল। ৮৪ ঘণ্টা ধরে অবস্থান–অনশন চালাচ্ছিলেন টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ আন্দোলনকারীদের জোর করে তুলে দেয় পুলিশ। কার্যত চ্যাংদোলা করে প্রিজন ভ্যানে তুলে দেওয়া হয় চাকরিপ্রার্থীদের।
ঠিক কী বলেছেন বিজেপি বিধায়ক? এই ঘটনার পর বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমরা শুক্রবার সকাল থেকে গোটা রাজ্য স্তব্ধ করে দেব। এত রাতে কেন মহিলাদের গায়ে হাত দিল পুলিশ? শুক্রবার সকালেই আমাদের আদালতে যাওয়ার কথা। আদালত কী রায় দেয়, সেই ভয়েই মাঝরাতে এভাবে আন্দোলনকারী সরিয়ে দেওয়া হল।’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, ১৪৪ ধারা মানতে হবে। একইসঙ্গে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়, প্রয়োজনীয় পুলিশ দিয়ে পর্ষদ অফিসে কর্মীদের ঢোকা–বেরনোর ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এই ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে। পুলিশের উদ্দেশে বিচারপতি লপিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘পুলিশ কি পাওয়ারলেস?’