বিবাহিতা মেয়েরা কি পিতার পরিবারের সদস্য নন? তা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। সেই বিষয়টি স্পষ্ট করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিবাহিত মহিলাও যে তার পিতার পরিবারের সদস্য সেই বিষয়ে সিলমোহর দিল আদালত। রাজ্য সরকারের কাছে জমির ক্ষতিপূরণের দাবি সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চ জানিয়েছিল বিবাহিতা মহিলা তার পিতার পরিবারের সদস্য। ডিভিশন বেঞ্চও একক বেঞ্চের সেই রায়কেই বহাল রাখল। এই মামলায় সরকার পক্ষের কেউ হাজির না হওয়ায় শুক্রবার বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: যৌন ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, কিশোরীদের পরামর্শ দিয়ে সুপ্রিম রোষে কলকাতা হাইকোর্ট
হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলা করেছিলেন রেখা পাল নামে এক মহিলা। তিনি বিবাহিতা। মামলা সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জমি রাজ্য অধিগ্রহণ করেছিল রাজ্য সরকার । ২০১২ সালের অক্টোবরে রাজ্যের শ্রম দফতরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছিল, যে পরিবারগুলির জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তারা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। ওই প্রকল্পের জন্য রেখার বাবার জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তাই তিনিও ক্ষতিপূরণ হিসেবে চাকরির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু, রাজ্য সরকার তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। রাজ্যের শ্রম বিভাগের তরফে জানানো হয়েছিল, এই বিজ্ঞপ্তিতে বিবাহিতা মেয়েদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রেখা যেহেতু বিবাহিতা তাই তার আবেদন খারিজ করা হয়েছে। ফলে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। উল্লেখ্য, রেখা বিবাহিতা হলেও বাবার মৃত্যুর পর মায়ের দেখাশোনা করেছেন।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৩ সালের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রেখা পাল। তার আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন যদি বিধবা বা বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলা তার পিতার পরিবারের সদস্য হতে পারেন তাহলে কেন একজন বিবাহিতা মহিলা তার পিতার পরিবারের সদস্য হতে পারবেন না? একই সঙ্গে তিনি কেন পৈতৃক সম্পত্তি পাবেন না? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন আইনজীবী।
সেই সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি অশোক কুমার দাস অধিকারী বলেছিলেন, ‘শুধুমাত্র লিঙ্গের ভিত্তিতে বিবাহিত কন্যা এবং বিবাহিত পুত্রের মধ্যে পার্থক্য বা বৈষম্য তৈরি করা যায় না।’ এরপরে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ ওই মহিলাকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। তবে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় রাজ্য সরকার। তাই ১০ বছর ধরে মামলা চলার পর শুক্রবার দুই বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কেই বহাল রাখে।