পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রমাণ পেশ করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার লোকসভায় পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের কাহিনী শোনান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন সেদেশের মন্ত্রিসভার সদস্যকেও স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসতে হল, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। পরাধীন ভারতে বাঙালি নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের অন্যতম উজ্জ্বল প্রতিনিধি ছিলেন। বরিশাল থেকে করাচির ক্ষমতার অলিন্দ হয়ে বনগাঁ, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের জীবন দেখে নিন এক নজরে।
১৯০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের বরিশাল জেলায় জন্মান যোগেন্দ্রনাথ। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাপুরুষদের অন্যতম ছিলেন তিনি। বাংলার নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের উত্থানে বর্ণহিন্দুদের থেকে মুসলিমদের প্রতি বেশি আস্থা ছিল তাঁর। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর। ১৯৫০ সালের ৮ অক্টোবর পদত্যাগ করে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে আসেন তিনি।
এদিন লোকসভায় মোদী বলেন, 'আরও একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল পাকিস্তানেই বাস করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি সমাজের একেবারে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করতেন তিনি। তাঁকে পাকিস্তানের প্রথম আইনমন্ত্রী করা হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ৯ অক্টোবর উনি ইস্তফা দেন। সেই ইস্তফায় তিনি লিখেছিলেন, হিন্দুদের বিতাড়ন করার এই নীতি পূর্ব পাকিস্তানে সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। পাকিস্তানের দাবি পূরণ হলেও মুসলিমরা সন্তুষ্ট নয়। তাদের নিরাপত্তার অভাব এখনো কাটেনি। তাই তারা এখন হিন্দু মেধাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। যাতে পাকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি, সামাজিক জীবন যেন কোনও ভাবেই হিন্দুদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়।'
১৯৩৭ সালে অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইনসভায় নির্দল প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে হারান কংগ্রেস প্রার্থীকে। নেতাজি ও শরত্চন্দ্র বসুর অনুগামী ছিলেন যোগেন্দ্রনাথ। ১৯৪০ সালে নেতাজিকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কারের পর কংগ্রেস ছেড়ে মুসলিম লিগে যোগ দেন তিনি। শহোরাওর্দি মন্ত্রিসভার সদস্য হন যোগেন্দ্রনাথ। তখনই বাবাসাহেব আম্বেদকরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলিত ফোরেশনের বাংলা শাখা খোলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক হিংসা শুরু হলে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়কে তাতে জড়িয়ে পড়তে বারণ করেন তিনি। তাঁর দাবি ছিল, কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে বিবাদে বোড়ে হতে পারে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তানের প্রথম আইনসভার ৬৯ জন সদস্যের একজন ছিলেন যোগেন্দ্রনাথ। সেই আইনসভার অস্থায়ী চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন তিনি। এর পর লিয়াকত আলি খানের মন্ত্রিসভায় আইন ও শ্রম মন্ত্রকের দায়িত্ব পান তিনি।
১৯৫০ সালের ৮ অক্টোবর পাকিস্তানি প্রশাসনের হিন্দুদের ওপর বৈষম্যের অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এর পর চলে আসেন ভারতে। ভারতে এসে তত্কালীন ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁয় বসবাস শুরু করেন তিনি। ১৯৬৮ সালের ৫ অক্টোবর সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।