‘কোনও সন্তানকে তার পিতামাতার যত্ন নেওয়া বন্ধ করতে বাধ্য করা যাবে না।’ সম্প্রতি একটি মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। স্বামী–স্ত্রীর বিবাদ সংক্রান্ত একটি মামলায় এই পর্যবেক্ষণ করে স্বামীর আবেদন খারিজ করেছেন বিচারপতি শম্পা দত্ত পাল। বিচারপতি আরও বলেছেন, ‘একজন স্ত্রীকে তাঁর প্রতিবন্ধী মায়ের সঙ্গে বসবাস করা বন্ধ করা যাবে না।’
আরও পড়ুন: স্বামীকে তাঁর বাবা-মায়ের থেকে দূরে রাখা স্ত্রীয়ের নিষ্ঠুরতা, জানাল হাইকোর্ট
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ২০০১ সালে। ২০০৯ সালে তাদের একটি ছেলে হয়। তবে ওই ব্যক্তি বেকার ছিলেন এবং তাঁর বাবা মা মারা যাওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে তিনি শ্বশুর বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন। অভিযোগ, পরে তাঁর স্ত্রী তাঁকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী তাড়িয়ে দেন এবং হুমকি দেন ও মারধর করেন। ঘটনায় ২০১৫ ওই ব্যক্তি স্ত্রীর বিরুদ্ধে বারুইপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। আদালত প্রাথমিকভাবে স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযুক্ত অপরাধগুলিকে প্রমাণ করার জন্য কোনও তথ্য খুঁজে পায়নি। যদিও কোনও তাঁদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছদের কোনও বিষয় ছিল না। সেই সক্রান্ত মামলায় বিচারপতি জানান, বিরোধটি স্বামীর সম্পত্তি বিক্রি নিয়ে ছিল।
আবেদনকারী মহিলার পক্ষে যুক্তি ছিল যে তাঁর বৃদ্ধ মা উভয় চোখেই ১০০ শতাংশ অন্ধ। ওই মহিলা তিনি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে কর্মরত। স্কুলটি তাঁর মায়ের বাড়ির কাছে অবস্থিত। বিচারপতি বলেন, ‘অভিযোগকারী স্বামীর বাবা-মা বেঁচে নেই বা তিনি চাকুরীজীবী নন। আবার তাঁর স্ত্রীর মাও দুই চোখেই ১০০ শতাংশ অন্ধ। তাঁকে যত্ন নেওয়ার ও রক্ষা করার কেউ নেই। এমন পরিস্থিতিতে আবেদনকারী মহিলা তাঁর মাকে মানসিক, শারীরিক সহায়তা প্রদান করছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয়।’ বিচারপতি পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘একজন পিতামাতার যত্ন নেওয়া একটি আবেগপূর্ণ এবং প্রেমময় কাজ। পৃথিবীর কোনও শক্তি তা থেকে এখন সন্তানকে আটকাতে পারে না এবং কোনও সন্তানকে তা বন্ধ করতে বাধ্য করা যায় না। ’
হাইকোর্ট জানায়, কেস ডায়েরিতে আবেদনকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী যে অভিযোগ এনেছেন তার উপযুক্ত কোনও প্রমাণ নেই। তাই মামলাটি চালিয়ে যাওয়া হল আইনের অপব্যবহার করা। এই বলে আদালত ওই মহিলার স্বামীর অভিযোগ খারিজ করে দেয়।