নিজের দোষ–ত্রুটি অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া একটা সুচারু পদ্ধতি। আর সেটাই এবার করে দেখাল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তবে ব্যর্থতার যাবতীয় দায় রাজ্যের কাঁধে চাপানোর প্রবণতা এই প্রথম নয়। এবার সেটাই দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও। উলটে অবাক করা জরিমানার ফতোয়া চাপিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের ঘাড়ে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেই কংগ্রেস জমানার ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’র নাম ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় বদলে দেন। তাতে বিরাট উপকার হবে মানুষের বলে প্রচার করা হয়েছিল। এমনকী ২০২২ সালের মধ্যে সবার মাথায় হবে ছাদ—এই ছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রচার। হাউজিং ফর অল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথায় ছাদের বন্দোবস্ত আজও করে উঠতে পারেনি মোদী সরকার। এটাই তাঁর সরকারের ব্যর্থতা। এখন ২০২২ সাল শেষের পথে। তাহলে উপায় কী? বিকল্প পথ হিসাবে নিঃশব্দে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সময়সীমা। ২০২৪ সাল এখন মোদী সরকারের লক্ষ্যমাত্রা। কারণ তখন লোকসভা নির্বাচন।
কী চাপিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের উপর? জানা গিয়েছে, পিএমএওয়াই (শহর) শেষ করার নয়া টার্গেট ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪। গ্রামীণ ক্ষেত্রে ৩১ মার্চ ২০২৪। তার মধ্যেও কি প্রকল্প শেষ হবে? সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রের কাছে। কারণ, ওই বছরই লোকসভা নির্বাচন। তখন রাজ্যগুলি যদি তাদের টার্গেট পূরণ করে দেয়, তার ফসল নির্বাচনে তুলে নেবে বিজেপি। আর সেটা করতে না পারলে মোটা মাশুল গুনবে রাজ্যগুলিই। যাই ঘটুক লাভ কেন্দ্রের।
চিঠিতে ঠিক কী লেখা হয়েছে? ইতিমধ্যে বাংলা–সহ বহু রাজ্য এই প্রকল্পে প্রাপ্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পায়নি। তাই কাজের গতি কোথাও মন্থর, কোথাও বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে নয়া নির্দেশিকা, প্রকল্পে যে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফান্ড’ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হয়, কাজে বিলম্ব হলে তা কেটে নেওয়া হবে। এমনকী রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে, অক্টোবর মাস থেকেই জরিমানা কার্যকর হবে। এই কাজে অনুমোদন দিতে একমাস দেরি করলে বাড়ি পিছু ১০ টাকা কাটা হবে। সময় বাড়লে বাড়বে জরিমানার অঙ্কও। হবে প্রতি মাসে ২০ টাকা। গ্রামীণ প্রকল্পে কেন্দ্রের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, ২ কোটি ৯৫ লক্ষ বাড়ি তৈরির। কিন্তু হয়েছে ২ কোটি ৩ লক্ষের কিছু বেশি। শহরকেন্দ্রিক প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ২২ লক্ষ বাড়ি তৈরি। সম্পূর্ণ হয়েছে মাত্র ৬৪ লক্ষ। ২০২১ সালের ৩১ মার্চের পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মিডল ইনকাম গ্রুপের ভর্তুকি। এই ক্রেডিট লিঙ্কড সাবসিডি স্কিমে সর্বাধিক ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যেত। তবে অনুমোদন সত্ত্বেও গত আট মাস টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাড়ি তৈরির প্রতি ধাপে ছবি জমা করতে হয়। সেই ছবি দিতে তিন দিন দেরি হলে জরিমানা করা হবে ঘর পিছু ১০ টাকা। অঙ্কটি সামান্য মনে হলেও আসলে তার পরিমাণ বিরাট।