বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > কলকাতা > মা-ই দেখিয়েছিল খুন করে পালানোর পথ, সুবীর চাকি হত্যায় ভিকিকে খুঁজছে পুলিশ

মা-ই দেখিয়েছিল খুন করে পালানোর পথ, সুবীর চাকি হত্যায় ভিকিকে খুঁজছে পুলিশ

ধৃত মিঠু হালদার। 

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকায় জমি-বাড়ির দালালি করত ভিকি। কিছু দুষ্কৃতীকে সঙ্গে নিয়ে একটি দল বানিয়েছিল সে। সুবীরবাবু বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকি। কিন্তু বাড়ির দাম শুনে পিছিয়ে যায়।

গড়িয়াহাটের কাঁকুলিয়া রোডে কর্পোরেট কর্তা সুবীর চাকি ও তাঁর চালক খুনের ঘটনায় গোয়েন্দারা জাল গুটিয়ে ফেলেছেন বলে জানালেন কলকাতার নগরপাল সৌমেন মিত্র। ঘটনায় ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা তিনি। তবে এখনো ৬ অভিযুক্তর সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সৌমেনবাবু জানিয়েছেন, কাঁকুলিয়া রোড জোড়া হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মিঠু হালদার ও তাঁর ছেলে ভিকি। কাঁকুলিয়া রোডেই মিঠুর শ্বশুরবাড়ি। সেই সূত্রে গোটা এলাকা চেনা তার। লকডাউনের আগে কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে থাকতেন সুবীর বাবুর মা। তখন সেখানে পরিচারিকার কাজ করতেন মিঠু। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, লকডাউনের পর মা-কে নিয়ে নিউটাউনের আবাসনে চলে যান সুবীরবাবু। এর পর কাঁকুলিয়া রোডের বাড়ি বিক্রি করতে বিজ্ঞাপন দেন তিনি।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এলাকায় জমি-বাড়ির দালালি করত ভিকি। কিছু দুষ্কৃতীকে সঙ্গে নিয়ে একটি দল বানিয়েছিল সে। সুবীরবাবু বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকি। কিন্তু বাড়ির দাম শুনে পিছিয়ে যায়। এর পর বহুজাতিক সংস্থার কর্তা সুবীরবাবুর কাছ থেকে অন্য উপায়ে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে সে। সেজন্য নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি কলকাতায় থাকতে শুরু করে। এর পর নাম ভাঁড়িয়ে অন্য ফোন নম্বর থেকে কথা বলে ফের সুবীরবাবুকে বাড়ি কেনার ইচ্ছাপ্রকাশ করে কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে ডাকে সে।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, বাড়ি কেনার কথা বলে রবিবার দ্বাদশীর দিন কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে সুবীরবাবুর সঙ্গে দেখা করার কথা হয় ভিকির। সেই মতো ওই দিন বিকেলে সেখানে পৌঁছন সুবীরবাবু। বাড়িতে ঢুকে চালক রবীন চলে যান দোতলায়। একতলায় ভিকির জন্য অপেক্ষা করছিলেন সুবীরবাবু। ভিকি সঙ্গে আরও কয়েকজন শাগরেদকে নিয়ে বালিগঞ্জ স্টেশনে নেমে ওই বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজায়। এর পর দরজা খুলে দেন সুবীরবাবু নিজেই।

জেরায় ভিকির মা মিঠু জানিয়েছেন, ঘরে ঢুকেই সুবীরবাবুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিকি ও তার শাগরেদরা। তাঁর হাতের ব্রেসলেট ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় তারা। এর মধ্যে ভিকিকে চিনে ফেলেন সুবীরবাবু। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে এর পর সুবীরবাবুকে ছুরি দিয়ে কোপাতে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। আর্তনাদ শুরে রবীনবাবু দোতলা থেকে নামার চেষ্টা করলে সিঁড়িতেই তার ওপর হামলা হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দুজনের। এর পর বাড়িতেই রক্তমাখা জামাকাপড় বদলে ঢাকুরিয়া স্টেশনে চলে আসে আততায়ীরা। সেখানে মায়ের হাতে রক্তমাখা জামাকাপড় তুলে দেয় ভিকি। তার পর চলে যায় কলকাতায় তার ঠিকানায়।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার মিঠুকে রক্তমাখা জামাকাপড় কাচতে দেখেন তাঁর বাড়ির মালিক। মিঠু তাঁকে জানান পথদুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় কাপড়ে রক্ত লেগেছে। কিন্তু মিঠুর শরীরে তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন না থাকায় সন্দেহ হয় তাঁর।

লুঠের জন্যই যে সুবীরবাবুকে খুন করা হয়েছিল তা প্রথম থেকে বেশ নিশ্চিত ছিলেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু করেন তাঁরা। খুনের পর রবীনবাবুর ফোনটি পাওয়া গেলেও সুবীরবাবুর ফোন নিখোঁজ ছিল। ঘটনার ৩ দিনের মধ্যে মূলচক্রীকে ধরলেও এখনো ফেরার ভিকি ও তার শাগরেদরা। তাদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

 

বন্ধ করুন