মাসে ৫০,০০০ টাকার থেকে সামান্য বেশি পেনশন পেলেও রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এ পর্যন্ত ৯৭ লাখ টাকা দান করেছেন সংস্কৃতের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা চিত্রলেখা মল্লিক। তাঁর কীর্তি শুনলে অবাক হতে হয়।
রবিবার সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাত্কারে চিত্রলেখা জানিয়েছেন, ২০০২ সাল থেকে শিক্ষাখাতে অর্থদান করতে শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘এই ৯৭ লাখের মধ্যে আমার পূর্বতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ লাখ টাকা দান করি আমার গবেষণার পথপ্রদর্শক পণ্ডিত বিধুভূষণ ভট্টাচার্যের স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশে।’
রাজাবাজারের ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন অধ্যাপিকা চিত্রলেখা মল্লিক বর্তমানে বাগুইআটি অঞ্চলের সাধারণ এক ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। আর্থিক ভাবে অসমর্থ গবেষকদের সাহায্যের জন্যই তিনি অর্থদানের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর গবেষণা গুরুর স্ত্রী হৈমবতী ভট্টাচার্যের স্মৃতিরক্ষার্থে ছাত্রদের বৃত্তি দিতেও ৬ লাখ টাকা দান করেছেন বলে জানিয়েছেন সত্তরোর্ধ চিত্রলেখা।
এছাড়া ২০০২ সালে ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের (NAAC) সদস্যদের সফরের আগে ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্যও তিনি ৫০,০০০ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।
হাওড়ার ইন্ডিয়ান রিসার্চ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড মেডিসিনে নিজের বাবা-মায়ের নামে বৃত্তি চালু করতে ৩১ লাখ টাকা দান করেছেন প্রাক্তন অধ্যাপিকা। পাশাপাশি, ২০০২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনা ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অকাতরে অর্থদান করেছেন চিত্রলেখা মল্লিক।
কোন অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই মহত্ পদক্ষেপ, জানতে চাইলে বিদূষী চিত্রলেখা বলেন, ‘উপনিষদ আমাদের শিখিয়েছে, জাগতিক সুখ-সমৃদ্ধি ত্যাগ করে অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতে। দৈনন্দিন যাপনের জন্য কত টাকাই বা আমার প্রয়োজন হয়? বেশি তো নয়।’
এতেই থেমে না থেকে জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলিকেও এবার আর্থিক সাহায্য করার পবরিকল্পনা করেছেন তিনি।
শিক্ষাগুরু পণ্ডিত বিধুভূষণ ভট্টাচার্যর নামে বৃত্তি চালু করতে চিত্রলেখার ৫০ লাখ টাকা অনুদানের কথা স্বীকার করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক।
ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘তিনি (চিত্রলেখা মল্লিক) সর্বদা আমাদের সঙ্গে সংযোগ রাখেন। এ বছর পুজোর ছুটির পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। অনুদানের অর্থ কীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, সেই বিষয়ে তিনি সবিস্তারে জেনেছেন।’