কারও নাম না করে রবিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকট কাটিয়ে উঠতে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করার পরও কিছু লোকের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য অপমানিত হচ্ছে রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসন।’ এদিন শহর কলকাতার বিভিন্ন দুর্গাপুজোর মধ্যে কলকাতা পুলিশের বডিগার্ড লাইন্স আবাসিকবৃন্দ আয়োজিত দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে এভাবে নাম না করে বিজেপি নেতাদেরই সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিছুদিন ধরেই বিজেপি নেতারা অভিযোগ তুলছেন যে রাজ্যের শাসকদল তথা রাজ্য সরকারের সঙ্গে পুলিশ হাত মিলিয়ে একাধিক বিজেপি নেতাকর্মীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার প্রমাণ চেপে দিচ্ছে। আর এই অভিযোগে ইন্ধন জুগিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। রাজ্যে ঘটা বিভিন্ন খুন, অপহরণ, ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করে ঘন ঘন টুইটের মাধ্যমে তিনি রাজ্যের আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সম্প্রতি পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুকে ঘিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের পুলিশ–প্রশাসনকে আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল।
গেরুয়া শিবির ও রাজ্যপালের পরিকল্পনামাফিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু মানুষ কেবল পুলিশ বাহিনী এবং রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করতে, তার দুর্নাম করতেই পছন্দ করেন। তাঁরা ভুলে যায় বছরের অন্যান্য সময়ের মতো এই কোভিড অতিমারী পরিস্থিতিতেও, এই কঠিন সময়ে কীভাবে পুলিশ নিজের পরিবারের কথা ভুলে মানুষের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। অসম্মান করলে মনে রাখবেন অসম্মান ফিরে আসে।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি–কে নিশানা করে আরও বলেন, ‘যদি রাজ্যে যক্ষ্মায় কারও মৃত্যু হয় সে ক্ষেত্রেও ওরা পশ্চিমবঙ্গের আইন–শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তারা বলবে যে ওই মৃত্যুও রাজনৈতিক হিংসার জেরেই হয়েছে।’ মমতার মতে, রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্যই এ জাতীয় প্রচার চালানো হচ্ছে।
রবিবারই করোনায় মৃত্যু হয়েছে কলকাতা পুলিশের দুই আধিকারিকের। সেই ঘটনার শোকপ্রকাশ করে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের মধ্যে অনেকেই সংক্রমিত হয়েছেন। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে গেলেও আজ অনেকেই আর আমাদের মধ্যে নেই। তাঁদের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।’ এদিন মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের কাছে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে মাস্ক পরে, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন।
শনিবার এক টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অভিযোগ করে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে আইন শৃঙ্খলার অবস্থা খুবই শোচনীয়। যেভাবে বিজেপি–সহ অন্য বিরোধী দলের কর্মীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে বা তাঁদের খুন করা হচ্ছে তা সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়। এ ধরনের ঘটনা কিন্তু অন্য রাজ্যে হয় না।’ সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন কলকাতা পুলিশের পুজো উদ্বোধনে নাম না করে বিজেপি–র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী বলেই মনে করছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।