সাদা খাতা দিয়ে চাকরি, দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে সুপারনিউমেরিক পদের পক্ষে সওয়াল- ১৭টি উপায়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনে (এসএসসি) নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল। এমনই জানাল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। সোমবার হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ যে রায় দিয়েছে, তাতে ওই ১৭টি ধাপের একেবারে খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রতিটি ধাপে কীভাবে দুর্নীতি হয়েছে, সেটাও ব্যাখ্যা করেছে বিচারপতি বসাক এবং বিচারপতি রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ।
এসএসসিতে নিয়োগ দুর্নীতির ১৭টি উপায়
১) ওএমআর শিটের মূল্যায়নের জন্য 'নাইসা'-কে বরাত দিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। দেওয়া হয়েছিল টেন্ডার। যা ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা এবং ১৫ নম্বর ধারার পরিপন্থী। ওই দুটি ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।
২) নাইসা নিজে ওএমআর শিট মূল্যায়নের কাজ করেনি। বরং অপর একটি সংস্থার হাতে সেই দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল।
৩) নাইসা যে সংস্থাকে কাজ করতে দিয়েছিল, সেই সংস্থা কমিশনের দফতরে গিয়ে ওএমআর শিট স্ক্যান করেছিল। কিন্তু সরাসরি ওই সংস্থাকে কাজের বরাত দেয়নি। ফলে বিষয়টি পুরোপুরি বেআইনি।
৪) ওএমআর শিটের আসল কপি নষ্ট করে দেওয়া হলে 'মিরর ইমেজ' রেখে দিতে হয়। স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারেও 'মিরর ইমেজ' থাকার কথা ছিল। অর্থাৎ 'মিরর ইমেজ' রেখে দিতে হত কমিশনকে।
৫) সিবিআই তদন্ত করতে নেমে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভার থেকে সেরকরম কোনও 'মিরর ইমেজ' পায়নি।
৬) আদতে নিজেদের সার্ভারে 'মিরর ইমেজ' না রেখেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওএমআর শিটের আসল কপি নষ্ট করে দিয়েছে বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই।
৭) ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট দেখিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। স্ক্যান করা ওএমআর শিট দেখানো হয়েছিল। সেইসময় কমিশন দাবি করেছিল যে ডেটাবেসে থাকা স্ক্যান করা ওএমআর শিট ছিল। সেটাই দেখানো হয়েছিল বলে দাবি করেছিল কমিশন।
৮) যতগুলি শূন্যপদের ঘোষণা করা হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি সংখ্যক প্রার্থী নিয়োগ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেটা 'গ্রুপ সি' হোক 'গ্রুপ ডি' হোক বা নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক হোক বা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক হোক।
৯) প্যানেলভুক্ত নন, এমন প্রার্থীদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্যানেলে নাম না থাকলেও চাকরি দিয়েছে কমিশন।
১০) পরীক্ষায় কিছু লেখেননি, সাদা খাতা জমা দিয়েছেন, তাঁরাও চাকরি পেয়েছেন। অনেকেই সেভাবে পেয়েছেন চাকরি।
১১) প্যানেলের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তারপরও চাকরি দেওয়া হয়েছে।
১২) মেধাতালিকায় যে প্রার্থীদের নাম ছিল, তাঁদের নম্বর প্রকাশ করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন।
১৩) প্যানেলের শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপরও চলেছিল কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া।
১৪) কতজনকে বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে এবং কতজন বেআইনিভাবে চাকরি করছেন, সেটা নিয়ে নিজেদের অবস্থান করেনি স্কুল সার্ভিস কমিশন, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং রাজ্য সরকার।
১৫) বেআইনিভাবে নিয়োগের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি করার পক্ষে সওয়াল করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন।
১৬) নিয়োগের জন্য যে নম্বর প্রয়োজন ছিল, সেটার থেকে কম নম্বর পেয়েছিলেন, এমন প্রার্থীকেও নিয়োগ করা হয়েছিল।
১৭) ‘গ্রুপ সি’, ‘গ্রুপ ডি’, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক - কোনও ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে নিয়োগ করা হয়নি।